পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ

কাল তোমার সতী-পনার বোঝাপড়া হবে। আ:-এই, যা না আমার সুমুখ থেকে একে সরিয়ে নিয়ে।

 মহাবীর। ( আস্তে আস্তে বলিল ) চলিয়ে—

[ ষোড়শী নির্দেশমত নিরুত্তরে পাশের অন্ধকার ধরে যাইতেছিল ]

 জীবানন্দ। ষোড়শী, একটু দাড়াও, প্রফুল্ল নেই, সে সদরে গেছে—তুমি পড়তে জানো, না?

 ষোড়শী | জানি।

 জীবানন্দ। তা হলে একটু কাজ করে যাও। ওই যে বক্সটা, ওর মধ্যে আর একটা কাগজের বাক্স পাবে। কয়েকটা ছোট-বড় শিশি আছে, যার গায়ে বাঙলায় মরফিয়া’ লেখা, তার থেকে একটুখানি ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাও। কিন্তু খুব সাবধান, এ ভয়ানক বিষ। মহাবীর, আলোটা ধর।

[মহাবীর আলো ধরিল । ]

 ষোড়শী। ( বাতির আলোকে কম্পিত-হস্তে শিশিটা বাহির করিয়া ) কতটুকু দিতে হবে?

 জীবানন্দ ( তীব্র বেদনায় অব্যক্ত ধ্বনি করিয়া) ঐ ত বললুম খুব একটুখানি। আমি উঠতেও পরিচিনে, আমার হাতের ও ঠিক নেই, চোখেরও ঠিক নেই। ওতেই একটা কাচের ঝিনুক আছে, তার অৰ্দ্ধেকেরও কম। একটা বেশী হয়ে গেলে এ ঘুম তোমার চণ্ডীর বাবা এসে ও ভাঙাতে পারবে না |

 [পরিমাণ স্থির করিতে ষোড়শীর হাত কাঁপিতে লাগিল, অবশেষে অনেক যত্নে অনেক সাবধানে নির্দেশমত ঔষধ লইয়া কাছে আসিয়া দাড়াইল। ]

 জীবানন্দ ( হাত বাড়াইয়া সেই বিষ লইয়া চোখ বুজিয়া মুখে ফেলিয়া দিল ) খুব কমই দিয়েচ—ফল হবে না হয়ত। আচ্ছা এই থাক।

 ষোড়শী পাশের ঘরে পা বাড়াইয়াছে, এমন সময় এককড়ি নিতান্ত ব্যস্ত ও ব্যাকুলভাবে প্রবেশ করিয়া ও এদিক-ওদিক চাহিয়া জীবানন্দের কানের কাছে চুপি চুপি কি বলিতে লাগিল। জীবানন্দের মুখের ভাবে বিশেষ পরিবর্তন দেখা গেল। ষোড়শী দ্বারপ্রান্তে স্তম্ভিতের মত দাড়াইয়া রহিল। ]

 জীবানন্দ। ( হাত নাড়িয়া ষোড়শীকে ) তোমার ভয় নেই, কাছে এসো, (ষোড়শী আসিলে ) পুলিশের লোক বাড়ি ঘিরে ফেলেচে—ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব গেটের মধ্যে ঢুকেচেন—এলেন বলে। ( ষোড়শী চমকিয়া উঠিল) জেলার ম্যাজিস্ট্রেট টুরে বেরিয়ে ক্রোশ-খানেক দূরে তাঁবু ফেলেছিলেন, তোমার বাবা এই রাত্রেই তাঁর কাছে

১৪