শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বলিলাম, না । দেশবন্ধু বলিলেন, আপনার মুসলমান-প্রীতি অতি প্রসিদ্ধ। ভাবিলাম, মানুষের কোন সাধু ইচ্ছাই গোপন থাকিবার জো নাই, খ্যাতি এতবড় কানে আসিয়াও পৌঁছিয়াছে ! কিন্তু নিজের প্রশংসা শুনিলে চিরদিনই আমার লজ্জা করে, তাই সবিনয়ে বদন নত করিলাম । দেশবন্ধু কহিলেন, কিন্তু এছাড়া আর কি উপায় আছে বলতে পারেন? এরই মধ্যে তারা সংখ্যায় পঞ্চাশ লক্ষ বেড়ে গেছে, আর দশ বছর পরে কি হবে বলুন ত ? বলিলাম, এটা যদিও ঠিক মুসলমান-প্রীতির নিদর্শন নয়, অর্থাৎ বছর-শেক পরের কথা কল্পনা করে আপনার মুখ ধেমন সাদা হয়েচে, তাতে আমার নিজের সঙ্গে আপনার খুব বেশী তফাৎ মনে হচ্চে না । তা সে যাই হোক, কেবলমাত্র সংখ্যাই আমার কাছে মস্ত জিনিস নয় । তা হলে চার কোটি ইংরেজ দেড়শ কোটি লোকের মাথায় পা দিয়ে বেড়াতে পারত না। নমঃপূদ্র, মালো, নট, রাজবংশী, পোদ, এদের টেনে নিন, দেশের মধ্যে, দশের মধ্যে এদের একটা মৰ্য্যাদার স্থান নিদিষ্ট করে দিয়ে এদের মানুষ করে তুলুন, মেয়েদের প্রতি যে অন্যায়, নিষ্ঠুর, সামাজিক অবিচার চলে আসচে, তার প্রতিবিধান করুন, ও-দিকের সংখ্যার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে না ! নমঃপূদ্র প্রভৃতি জাতির লাঞ্ছনার কথায় তাহার বুকে যেন শেল বিদ্ধ হইতে থাকিত। কে নাকি একবার তাহকে বলিয়াছিল, দেশবন্ধু শব্দের আর একটা অর্থের নাম চণ্ডাল। এই কথায় তিনি আনন্দে উৎফুল্প হইয়া উঠিয়াছিলেন । নিজে উচ্চকুলে জন্মিয়াছিলেন বলিয়াই বোধ হয়, উচ্চজাতির দেওয়া বিনা-দোষের এই অপমানের গ্লানি নিপীড়িতদের সহিত সমভাগে ভোগ করিবার জন্য প্রাণ র্তার আকুল হইয়া উঠিত। ব্যগ্র হইয়া বলিয়া উঠিলেন, আপনারা দয়া করে আমাকে এই পলিটিক্সে'র বেড়াজাল থেকে উদ্ধার করে দিন, আমি ওই ওদের মধ্যে গিয়ে থাকিগে। আমি ঢের কাজ করতে পারব। এই বলিয়া তিনি ইহাদের প্রতি দীর্ঘকাল ধরিয়া হিন্দুসমাজ কত অত্যাচার করিতেছে, তাহাই এক একটা করিয়া বলিতে লাগিলেন। কহিলেন, বেচারাদের ধোপা-নাপিত নেই, ঘরামীরা ঘর ছেয়ে দেয় না। অথচ এরাই মুসলমান খ্ৰীষ্টান হয়ে গেলে আবার তারাই এসে এদের কাজ করে। অর্থাৎ হিন্দুৱাই প্রকারাস্তরে বলচে হিন্দুর চেয়ে মুসলমান খ্ৰীষ্টানই বড়। এ-রকম senseless সমাজ মরবে না ত মরবে কে ? এই বলিয়া বহুক্ষণ স্থির থাকিয়া সহসা প্রশ্ন করিলেন, আপনি আমাদের অহিংস-অসহযোগ বিশ্বাস করেন ত ? ఫిష్క్రి
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩০৬
অবয়ব