জীবানন্দ। আচ্ছ এমন কিছুই কি নেই, যাতে সন্ন্যাসিনীও খুশী হয়?
ষোড়শী। তা হয়ত আছে, কিন্তু সেজন্য কেন আপনি ব্যস্ত হচ্ছেন?
জীবানন্দ। (একটু ক্ষীণ হাসিয়া) আমার ঢের দোষ আছে, কিন্তু পরের উপকার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি এ দোষ আজও কেউ দেয়নি। তা ছাড়া এখন বলচি বলেই যে ভালো হয়েও বলব, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই—এমনিই বটে। এমনিই বটে! সারাজীবনে এ-ছাড়া আর আমার কিছুই বোধ হয় নেই।
জীবানন্দ। (হঠাৎ সেই হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া) সন্ন্যাসিনীর কি সুখ-দুঃখ নেই? সে খুশী হয়, পৃথিবীতে এমন কি কিছুই নেই?
ষোড়শী। কিন্তু সে ত আপনার হাতের মধ্যে নয়।
জীবানন্দ। যা মানুষের হাতের মধ্যে? তেমন কিছু?
ষোড়শী। তাও আছে, কিন্তু ভালো হয়ে যদি কখনো জিজ্ঞাসা করেন তখনই জানাব।
জীবানন্দ। (তাহার হাতটাকে বুকের কাছে টানিয়া) না, না, আর ভালো হয়ে নয়—এই কঠিন অমুখের মধ্যেই আমাকে বল। মানুষকে অনেক দুঃখ দিয়েচি, আজ নিজের ব্যথার মধ্যে পরের ব্যথা, পরের আশার কথাটা একটু শুনে নিই। নিজের দুঃখের একটা সদগতি হোক।
ষোড়শী। ডাক্তারবাবু বোধ হয় এলেন।
[ডাক্তার ও এককড়ি প্রবেশ করিল। ডাক্তার ষোড়শীকে এখানে দেখিয়া একেবারে আশ্চর্য্য হইয়া গেলেন। কিন্তু কিছু না বলিয়া নীরবে শয্যাপ্রাস্তে আসিয়া রোগ পরীক্ষা করিতে নিযুক্ত হইলেন; ষোড়শী এই সময়ে প্রস্থান করিল।]
এককড়ি। যদি ভালো করতে পারেন ডাক্তারবাবু, বকশিসের কথা ছেড়েই দিন— আমরা সবাই আপনার কেনা হয়ে থাকব।
ডাক্তার। (পরীক্ষা শেষ করিয়া) অত্যাচার করে রোগ জন্মেচে। সাবধান না হলে পিলে কি লিভার পাকা অসম্ভব নয়, এবং তাতে ভয়ের কথা আছে। তবে সাবধান হলে নাও পাকতে পারে এবং তাতে তয়ের কথাও কম। তবে এ-কথা নিশ্চয় যে ওষুধ খাওয়া আবশ্যক।