পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শী

 জীবানন্দ। এ অবস্থায় কলকাতায় যাওয়া সম্ভব কি না তা বলতে পারেন?

 ডাক্তার। যদি যেতে পারেন তা হলেই সম্ভব, নইলে কিছুতেই সম্ভব নয়।

 জীবানন্দ। এখানে থাকলে ভাল হবে কি না বলতে পারেন?

 ডাক্তার। (বিজ্ঞের মত মাথা নাড়িয়া) আজ্ঞে না হুজুর, তা বলতে পারিনে। তবে এ-কথা নিশ্চয় যে এখানে থাকলেও ভালো হতে পারেন, আবার কলকাতা গিয়ে ভালো নাও হতে পারেন।

 এককড়ি। হুজুরের ব্যথাটা-

 ডাক্তার। এ-রকম ব্যথা হঠাৎ বাড়ে, আবার হঠাৎ কমে যায়। কাল সকালেই হুজুর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে এ-কথা নিশ্চয় যে, আমাকে আবার আসতে হবে।

[এককড়ির কাছ থেকে ভিজিট লইয়া ডাক্তার প্রস্থান করিলেন ]

 জীবানন্দ। কি হবে এককড়ি?

 এককড়ি। ভয় কি হুজুর, ওষুধ এল বলে। বল্লভ ডাক্তারের একশিশি মিকচার খেলেই সব ভালো হয়ে যাবে।

 জীবানন্দ। (ষোড়শী যে দ্বারপথে একটু আগে বাহির হইয়া গেছে সেইদিকে উৎসুক-চোখে চাহিয়া) ওঁকে একবার ডেকে দিয়ে-

[ এককড়ি বাহিরে গিয়া ক্ষণেক পরে পুনরায় প্রবেশ করিল।]

 এককড়ি। তিনি নেই, বাড়ি চলে গেছেন হুজুর। ভোর হয়ে এসেছে।

 জীবানন্দ। (ব্যগ্র ব্যাকুল-কণ্ঠে) আমাকে না জানিয়ে চলে যাবেন না। এমন হতেই পারে না এককড়ি!

 এককড়ি। হাঁ হুজুর, তিনি ডাক্তারবাবু আসবার পরেই চলে গেছেন। বাইয়ে সর্দার বসে আছে, সে দেখেচে ভৈরবী-ঠাকরুণ সোজা চলে গেলেন।

 জীবানন্দ। (কিছুক্ষণ চোখের দিকে সোজা তাকাইয়া থাকিয়া) তা হলে আলো নিভিয়ে দিয়ে তুমিও যাও এককড়ি, আমি একটু ঘুমুব।

[ এককড়ি আলো নিভাইয়া দিল। জীবানন্দ বেদনা-ম্লানমুখে পাশ ফিরিয়া শুইলেন। আলো নিভাইতেই অতি প্রত্যুষের আবছায়া আভা জানালা দিয়া ঘরে ছড়াইয়া পড়িল। ]
২৩