ষোড়শী ষোড়শী। (মুদ্ধিলে পড়িয়া) এসব সাধু সঙ্কল্প কি কাল সকাল পর্য্যন্ত খাকৰে ? (জীবানন্দ নীরব রছিলেন) কিন্তু আবণ্ডকের চেয়ে একটা দিনও বেশী থাকবেন না আমাকে কথা দিন। এবং সে-ক’টা দিন আগেকার মত সাবধানে থাকবেন বলুন ? জীবানন্দ । ( সে-কথায় কান না দিয়া) আমার কৃতকর্থের ফল যদি আমি ভোগ করি সে অভিযোগ আমি কার কাছে করব না-কিন্তু যাবার সময় তোমার কাছে আমার শুধু একটিমাত্র দাবী আছে—(পকেট হইতে একখানি পত্র বাহির করিয়া বোড়শীর হাতে দিয়া) এই চিঠিখানি ফকিরসাহেবকে দিয়ে । ষোড়শী। দেবো । কিন্তু এ পত্র আমি কি পড়তে পারিনে ? - জীবানন্দ । পার, কিন্তু আবশুক নেই। এর জবাব দেবার ত প্রয়োজন হৰে না। আমাকে দুঃখ থেকে বাচাবার জন্তে তার ঢের বেশি দুঃখ তুমি নিজে নিয়েচ। নইলে এমন করে হয়ত আমাকে –কিন্তু যাক সে ! আমার শেষ অনুরোধ এতেই লেখা আছে, তা যদি রাখতে পার, তার চেয়ে আনন্দ আর আমার নেই। ষোড়শী। তাহলে পড়ি ? ষোড়শী নীরবে চিঠিখানি পড়িল, তাহার মুখে ভাবের একান্ত পরিবর্তন ঘটিল ; জীবানন্দকে আড়াল করিয়া তাড়াতাড়ি সজল চক্ষু মুছিয়া ফেলিল। ] ' ষোড়শী। আমি যে কুষ্ঠাশ্রমের দাসী হয়ে যাচ্ছি এ খবর তুমি জানলে কি করে ? জীবানন্দ । কুষ্ঠাশ্রমের কথা অনেকেই জানে। আর তোমার কথা ? আজই দেবতার স্থানে দাড়িয়ে যারা শপথ করে গেল, নিজের কানে শুনেও আমি স্বাদের চিনতে পারিনি, তুমি তাদের চিনলে কি করে ? ষোড়শী। তোমার আর সংসারে কি মন নেই ? সমস্ত বিলিয়ে নষ্ট করে দিয়ে তুমি কি সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে যেতে চাও নাকি ? জীবানন্দ । (সহসা উত্তেজিত হইয়া) আমি সন্ন্যাসী ? মিছে কথা। জামি বঁাচতে চাই—মহিষের মাঝখানে মানুষের মত বঁচিতে চাই। বাড়ি চাই, ঘর চাই, স্ত্রী চাই, সন্তান চাই—আর মরণ যেদিন আটকাতে পারব না, সেদিন তাদের চোখের উপর দিয়েই চলে খেতে চাই। কিন্তু এ প্রার্থনা জানাব আমি কার কাছে ? w [ গাড়োয়ানের প্রবেশ ] গাড়োয়ান। মা, শৈবালীখি সাত-আট কোশের পথ, এখন বার না হলে পোঁছাতে বেলা হয়ে বাবে ।
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৯৩
অবয়ব