পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ যায়। সেই নতুন-বোঁয়ের মুখের এতবড় শক্ত কথায় রমণীবাবু ক্ষেপিয়া গেলেন, বিশেষত: তৃতীয় ব্যক্তির সমক্ষে। মুখখানা বিকৃত করিয়া কহিলেন, কার বাড়ি এ ? তোমার ? বলতে একটু লজ্জা হলো না ? সবিতা তাহার প্রতি চাহিয়া বহুক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন, তারপরে জান্তে জান্তে বলিলেন, ই, আমার লজ্জা পাওয়া উচিত সেজবাবু, তুমি সত্যি কথা বলেচে ন, এ-বাড়ি আমার নয় তোমার—তুমিই দিয়েছিলে । কাল আমি আর কোৰাও চলে যাবে, তখন সবই তোমার থাকবে । তেরো বৎসর পরে চলে যাবার দিনে তোমার একটি কপর্দকও আমি লঙ্গে নিয়ে যাবো না, সমস্ত তোমাকে ফিরিয়ে দিলুম। এই কণ্ঠস্বরে রমণীবাবুর চমক ভাঙিল, হতবুদ্ধি হইয়া বলিলেন, কাল চলে যাবে কি রকম ? ই, আমি চলে যাবে। ! চলে যাবে বললেই যেতে দেবো তোমাকে ? আমাকে বাধা দেবার মিথ্যে চেষ্টা কোরো না সেজবাবু, আমার সমস্ত শেষ হয়ে গেছে—এ আর ফিরবে না । এতক্ষণে রমণীবাবুর ছস হইল যে ব্যাপারটা সত্যই ভয়ানক হইয়া উঠিল ; ভয়? পাইয়া কহিলেন, আমি কি সত্যিই বলেচি নতুন-বোঁ এ-বাড়ি তোমার নয়, আমার রাগের মাথায় কি একটা কথা বার হয়ে যায় না ? সবিতা কহিলেন, রাগের জন্য নয় । রাগ পড়ে যাবে—হয়তো দেরি হবে— তখন বুঝবে এতবড় বাড়ি দান করার ক্ষতি তোমার সইবে না, চিরকাল কাটার মতো তোমার মনে এই কথাটাই ফুটবে যে, আমাদের দুজনের দেনা-পাওনায় একলা তুমিই ঠকেচো। দাড়ি-পাল্লায় একটা দিক যখন শূন্ত দেখবে তখন অন্যদিকে বাটখারার ভার তোমার বুকে যাতার মতো চেপে বসবে—সহ করার শিক্ষা তোমার হয়নি ; কিন্তু আর তর্ক করার জোর আমার নেই-আমি বড় ক্লান্ত। বিমলবাবু, আর বোধ করি দেখা হবার আমাদের অবকাশ থাকবে না-আমি কালকেই চলে যাবো । কোথায় যাবেন ? সে এখনো জানিনে । কিন্তু যাবার আগে দেখা হবেই। আমি আবার আসবো । সময় পান আসবেন। আজ কিন্তু আমি চললুম। এই বলিয়া সবিতা আজ উভয়কেই নমস্কার করিয়া উঠিয়া গেল। বিমলবাবু কহিলেন, রমণীবাবু, আমারও নমষ্কার নিন—চললুম। ՓՀ