পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় কিন্তু চিরস্থায়ীই তো হয়ে রইলো । তা জানিনে নতুন-বোঁ। আমার আশা, সংসারে আজো তোমার জানতে কিছু বাকী আছে, আজো তোমার সকল দেখাই এখানে শেষ হয়ে যায়নি। আশীৰ্ব্বাদ যদি তোমাকে করতেই হয়, এই আশীৰ্ব্বাদ করি সেদিন যেন তুমি সহজেই এর একটা কুল দেখতে পাও । -- সবিতা উত্তর দিলেন না, আবার দুজনের বহুক্ষণ নিঃশব্দে কাটিল। মুখ যখন তিনি তুলিলেন তখন উজ্জল দীপালোকে স্পষ্ট দেখা গেল তাহার চোখের পাতা দুটি ভিজিয়া ভারি হইয়া উঠিয়াছে ; মৃদুকণ্ঠে কহিলেন, তারক বৰ্দ্ধমানের কোন একটা গ্রামে মাস্টারি করে, সে আমাকে ডেকেচে । যাবো দিনকতক তার কাছে ? যাও । তুমি কি এখন কিছুদিন কলকাতাতেই থাকবে ? থাকতেই হবে। এখানে একটা নতুন আফিস খুলেচি, তার অনেক কাজ বাকী । সবিতা একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, টাকা তো অনেক জমালে—আর কি করবে ? প্রশ্ন শুনিয়া বিমলবাবু হাসিলেন, বলিলেন, জমাইনি, এগুলো আপনি জমে উঠেচে নতুন-বেী—ঠেকাতে পারিনি বলে। কি করবো জানিনে, ভেবেচি সময় হলে একজনের কাছে শিখে নেবো তার প্রয়োজন । সবিতা উঠিয়া গিয়া পাশের জানালাটা খুলিয়া দিয়া ফিরিয়া আসিয়া বসিলেন, বলিলেন,—এ-বাড়িটায় আর আমার দরকার ছিল না—ভেবেছিলুম ভালোই হোলো যে গেলো। একটা ঝঞ্চাট মিটলো ; কিন্তু তুমি হোতে দিলে না । ভাড়াটের রইলো, এদের দেখো । দেখবো । আর একটি অমুরোধ করবো, রাখবে ? কি অনুরোধ নতুন-বোঁ ? আমার মেয়ে আমার স্বামী রইলেন বনবাসে। যদি সময় পাও তাদের একটু খোজ নিও । বিমলবাবু হাসিমুখে একটুখানি ঘাড় নাড়িলেন, কিছু বলিলেন না। ইহার কি যে অর্থ সবিতা ঠিক বুঝিলেন না, কিন্তু বুকের মধ্যে মানদের ঝড় বহিয়া গেল। হাত ছুটি এক করিয়া নীরবে কপালে ঠেকাইলেন, সে স্বামীর উদ্দেশে, না বিমলবাবুকে, ৰোধ করি নিজেও জানিলেন না। একমুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়, তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া বলিলেন, আমার স্বামীর কথা একদিন তোমাকে নিজের মুখে শোনাবো— }^*