পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় গৌরব, না আছে সন্মান। নিজেকে সে বুঝাইয়া বলিতে লাগিল, আমি গরীব বলেই তো কাঙাল-বৃত্তি নিতে পারিনে। অন্নাভাব হয়েচে বলে পথের উচ্ছিষ্ট তুলে মুখে পুরবো কেমন করে ? এ হয় না—এ হয় না—এ যে অসম্ভব ! তথাপি বুকের ভিতরটায় কেমন যেন করিতে থাকে। তথায় কে যেন বার বার বলে, বাহিরের ঘটনা এমৃনিই বটে ; কিন্তু যে-অস্তরের পরিচয় সেই প্রথম দিন হইতে সে নিরস্তর পাইয়াছে সে-বিচারের ধার। কি ওই আইনের বই খুলিয়া মিলিবে ? যেমেয়েদের সংসর্গে তাহার এতকাল কাটিল সেখানে কোথায় সারদার তুলনা? অকপট নারীত্বের এতবড় মহিমা কোথায় খুজিয়া মিলিবে ? অথচ সেই সারদাকে আজ সে কেমন করিয়াই না অপমান করিয়া আসিল ! বাসায় পৌঁছিয়া দেখিল ঝি তখনো আছে। একটু আশ্চর্ঘ্য হইয়াই জিজ্ঞাসা করিল, তুমি যাওনি এখনো ? ঝি কহিল, ন দাদা, ও-বেলায় তোমার মোটে খাওয়া হয়নি, এ-বেলায় সমস্ত ষোগাড় করে রেখেচি, পোয়াটাক মাংস কিনেও এনেচি—সব গুছিয়ে দিয়ে তবে ঘরে ষাবো । সকালে সত্যিই খাওয়া হয় নাই, মাছি পড়িয়া বিঘ্ন ঘটিয়াছিল,কিন্তু রাখালের মনে ছিল না। ইতিপূৰ্ব্বেও এমন কতদিন হইয়াছে, তখন সকালের স্বল্পাহার রাত্রের ভুরিভোজনের আয়োজনে এই বি-ই পুর্ণ করিয়া দিয়াছে। নূতন নয়, অথচ তাহার কথা শুনিয়া রাখালের চোখ অশ্র-ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল। বলিল, তুমি বুড়ো হয়েচে নানী, কিন্তু মরে গেলে আমার কি দুর্দশা হবে বল তো ? জগতে আর কেউ নেই যে তোমার দাদাবাবুকে দেখবে। এই স্নেহের আবেদনে ঝির চোখেও জল আসিল । বলিল, সত্যি কথাই তো । বুড়ো হয়েচি, মববো না ? কতদিন বলেচি তোমাকে, কিন্তু কাম দাও না—হেসে উড়িয়ে দাও। এবার আর শুনবে না, বিয়ে তোমাকে করতেই হবে । দু’দিন বেঁচে থেকে চোখে দেখে যাবো, নইলে মরেও মুখ পাবো না দাদা । রাখাল হাসিয়া বলিল, তা হলে সে মুখের আশা নেই নানী। আমার ঘর-বাড়ি নেই, বাপ-মা, আপনার লোক নেই, মোট-মাইনের চাকরি নেই, আমাকে মেয়ে জেবে কে ? ইস্ ! মেয়ের ভাবনা । একবার মুখ ফুটে বললে যে কত গও সম্বন্ধ এসে হাজির হবে । ভূমি একটা করে দাও না নানী। পারিনে বুঝি ? আমার হাতে লোক অাছে, তাকে কালই লাগিয়ে দিণ্ডে পারি। - እፀፃ