পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় রাখাল মাথা নাড়িয়া অস্বীকার করিল, না, সে হয় না। কহিল, আমার বুড়ে নানী বেঁচে থাক, আমার কুকার অক্ষয় হোক, তার সিদ্ধ রায়াই আমার অমৃত, বড় ঘরের বড়রকমের খাওয়ার আমার লোভ নেই নতুন-মা। সবিতা বলিলেন, লোভের জন্য বলিনে রাজু, কিন্তু না খেয়ে আজ যদি চলে ৰাও, হঃখের আমার সীমা থাকবে না। এ তোমাকে বললুম। অপরাধ ঢের বেশি বাড়িয়া গেল, রাখাল নিৰ্ম্মম হইয়া কছিল, বিশ্বাস হয় না নতুন-মা। মনে হয় এ শুধু কথার কথা, বলিতে হয় তাই ৰল। কে আমি, ষে আমি না খেয়ে গেলে আপনার দুঃখের সীমা থাকবে না ? কারো জন্তেই আপনার দুঃখবোধ নেই। এই আপনার প্রকৃতি । দুঃসহ বিস্ময়ে সবিতার মুখ দিয়া শুধু বাহির হইল, বলে কি রাজু ? কেউ বলে না বলেই বললাম নতুন-মা। আপনার সৌজন্ত, সহৃদয়ত, আপনার বিচার-বুদ্ধির তুলনা নেই। আর্তের পরম বন্ধু আপনি, কিন্তু দুঃখীর মা আপনি নন। দুঃখবোধ শুধু আপনার বাইরের ঐশ্বৰ্য্য, অস্তরের ধন নয়। তাই যেমন সহজেই গ্রহণ করেন, তেমন অবহেলায় ত্যাগ করেন। আপনার বাধে না । বিমলবাবু বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে স্তব্ধভাবে চাহিয়া রছিলেন। রাখাল বলিল, আপনি আমার অনেক করেচেন নতুন-মা, সে আমি চিরদিন মনে রাখবো। কেবল মুখের কথা দিয়ে নয়, দেহ-মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে। আপনার সঙ্গে আর বোধ করি আমার দেখা হবে না। হয় এ ইচ্ছাও নেই। কিন্তু নিজের যদি কিছু পুণ্য থাকে তার বদলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানাই, এবার যেন আপনাকে তিনি দয়া করেন—অজানার মধ্যে থেকে জানার মধ্যে এবার ষেন তিনি আপনাকে স্থান দেন। শেষের দিকে হঠাৎ তাহার গলাটা ধরিয়া আসিল । সবিতা একদৃষ্টে তাহার প্রতি চাহিয়াছিলেন, কথা শুনিয়া রাগ করিলেন না, বরং গভীর স্নেহের সুরে বলিলেন, তাই হোক রাজু, ভগবান যেন তোমার প্রার্থনাই মঞ্জুর করেন। আমার অদৃষ্টে যেন তাই ঘটতে পায়। চললাম নতুন-মা। সবিতা উঠিয়া আসিয়া তাহার একটা হাত ধরিয়া বলিলেন, রাজু, কিছু কি হয়েচে বাবা ? কি হবে নতুন-মা ? এমন কিছু বা তোমাকে আজ এমন চঞ্চল করেচে। তুমি ত নিষ্ঠুর নও-কটু কথা বলা তোমার স্বভাব নয় | প্রত্যুত্তরে রাখাল হেঁট হইয়া শুধু তাহার পায়ের ধূলা লইল, আর কিছু বলিল না। እ¢ »