পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় তারক সবিতার কথার রহস্তভেদ করিতে পারিল না , ছঃখিত-চিত্তে নিৰ্ব্বাক্ হইয়। রছিল। অনেকক্ষণ পরে ধীরে ধীরে কহিল, মা, মাহুষকে মাছুব ছোট ভাবে কি করে, ভাই ভাৰি। আমি কিন্তু মানুষের পরিচয় একমাত্র মানুষ ছাড়া জাত-গোত্র-কুল-নীল দিয়ে আলাদা করে ভাবতে পারিনে। সেইজন্ত আমার কাছে মুসলমান, খ্ৰীষ্টান, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, বৈষ্ণব, শাক্ত সমস্তই সমান। সবিতার বিষাদ-গষ্ঠীর মুখে আনন্দের আভা ফুটিয়া উঠিল। তিনি বলিলেন, আমি তা জানি তারক। তোমার অন্তঃকরণ কত যে উচু ও উদার, তোমার সঙ্গে পরিচিত হবার পূর্কেই তা জেনেচি। তোমাকে আমি স্নেহ করি, বিশ্বাস করি বাবা। তারক বিস্ময় ও কৌতুহলমিশ্রিত কণ্ঠে কহিল, আমাকে দেখার আগে থেকেই আমার পরিচয় জেনেছিলেন মা ? কই, এতদিন তো বলেননি। সবিতা সস্নেহে হাসিলেন। তারক কহিল, কিন্তু যার কাছে আমার কথা শুনে থাকুন না কেন, আমি যে বিশ্বাসের উপযুক্ত তা কি করে জানলেন বলুন তো ? মমতাকোমল-কণ্ঠে সবিতা বলিলেন, কি করে যে জানলাম, তা নাইবা শুনলে বাবা ! তবে জেনেচি বলেই তোমার মেহের আহবান রাখতে রাজুরও মনে ব্যথা দিয়ে এখানে এসেচি, এতে কোনও ভুল নেই। তারক অভিভূত-স্বরে কহিল, আমাকে এত স্নেহ এত বিশ্বাস করেন মা ? সবিতা গম্ভীরকণ্ঠে বলিলেন, শুধু বিশ্বাস নয় বাবা, তারও চেয়ে বড় কথা, তোমার উপরে নির্ভর করার সাহস আমি পেয়েচি। তুমি তো জানো তারক, আমার ছেলে নেই। রাহু আমার ছেলের অভাব পূর্ণ করলেও এখনও কিছু অপূর্ণ আছে। তোমাকে সে শূন্যতা পূর্ণ করতে হবে বাবা। তারক বিস্ময়-বিমূঢ়-চিত্তে অভিভূতের মত চাহিয়া রহিল। >boo