পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সবিতা বলিলেন, এই ধূলোময়লার দেশে তোমার খুবই কষ্ট হচ্চে বুঝতে পাচ্চি। ভূমি ফিরে যাও। আমি এখানেই রয়ে গেলুম। বিমলবাবু বলিলেন, আচ্ছা । বিমলবাবু চলিয়া যাইতেছিলেন, পিছন হইতে সবিতা ডাকিলেন, শোনো। বিমলবাবু ফিরিলে সবিত র্তাহার পানে বেনাবিহ্বল দৃষ্টি তুলিয়া বলিলেন, একটা কথার উত্তর দিয়ে যেতে পারবে আমাকে ? বিমলবাবু বলিলেন, বলে। জন্ম-জন্মাস্তরেও কি আমাকে এই ক্ষমাহীন গ্লানির বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে ? সবিতার কণ্ঠ বাষ্পারুদ্ধ হইয়া আসিল । বলিলেন, কিন্তু রেণু যে বড় হয়েও একদিন আমাকে 'মা' বলে ডেকেছিল, আপন হাতে সেবা-যত্ন আদর করেছিল, তাতেও আমার কালি মূছে যায়নি ? বিমলবাবু বলিলেন, তোমার মনই এর সঠিক উত্তর দেবে সবিতা । আচ্ছ, আর একটা কথা। মানুষের অস্তরের প্রধান অবলম্বন যখন এমনি করে ভেঙে যায় মানুষ তখনও বেঁচে থাকে কেমন করে –কি নিয়ে জানো ? আমার মনে হয় তুমি যা হারিয়েছে সংসারের সকল অভাগাদের মধ্যে, সকল দুঃখীজনের মধ্যে তা খুঁজে পাবে। সবিতা যাহা বলিয়াছিলেন হইলও ঠিক তাহাই । ছোটগল্পী তাহার এক যোনপোকে লইয়া আসিয়াছিলেন ব্ৰজবাবুকে কলিকাতায় লইয়া যাইবার জন্য। ব্ৰজবাৰু কোনও কথা কহিবার পূৰ্ব্বে সবিতা বলিলেন, ওঁর এই দেহ-মন নিয়ে আর কলকাতায় ফেরা সম্ভব নয়। শেষ-বয়সের শোকাৰ্ত্ত দিনগুলো এইখানে তৰু কতকটা শাভিতে কাটাবে। .مبيع ছোটগিৰী বলিলেন, এখানে একজন তো বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারালো । অসুখ হলে দেখবে কে, সেবা করবে কে ? তা ছাড়া পাঁচজনেই বা আমাকে বলবে কি ? সবিতা বলিলেন, সেবার জন্ত তুমি নিজে এখানে থাকতে পারে। ওঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া চলবে না । ছোটগিৰী বলিলেন, আপনাকে তো ঠিক চিনতে পায়চিনে । সবিতা বলিলেন, আমি তোমাদের শ্বশুরবাড়ির লোক, জাষ্ট্ৰীয় হই। তুমি আমাকে কখনও দেখোনি। চিনবে কেমন করে ? .