পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভাষার কারুকার্য্য আমার নাই। ওতে যে পরিমাণ বিজ্ঞা এবং শিক্ষার প্রয়োজন সে আমি পাইনি, তাই মনের ভাব প্রচলিত সহজ কথায় বলাই আমার অভ্যাস-এবং এমনি করেই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দুগ্ৰহ এসে বিঘ্ন ঘটালে। একে জামি বিখ্যাত কুঁড়ে, তাতে বায়ু-পিত্ত্ব-কফ আদি আয়ুৰ্ব্বেদোক্ত চরের দল একযোগে কুপিত হয়ে আমাকে শয্যাশায়ী করে দিল। এমন ভরসা ছিল না যে, নড়তে পারবো। কিন্তু একটা বিপদ এই যে, চিরকাল দেখে আসচি আমার অস্ত্রখের কথা কেউ বিশ্বাস করে না, যেন ও আমার হতে নেই। কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম সবাই ঘাড় নেড়ে স্মিতহাস্যে বলচেন, উনি আসবেন না তো ? এ আমরা জানতাম । সেই বাক্যবাণের ভয়েই আমি কোনমতে এসে উপস্থিত হয়েচি। এখন দেখচি ভালোই করেচি। এই না-আসতে পারার দুঃখ আমার আমরণ ঘূচতো না। কিন্তু যা লিখে আনবার ইচ্ছে ছিল, সে হয়ে ওঠেনি। একটা কারণ পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করেচি, তার চেয়েও বড় কৈফিয়ৎ আছে। মামুষের অল্প অল্প পাওয়ার কথাই মনে থাকে, তাই লিখতে গিয়ে দেখলাম কবির কাছ থেকে পাওয়ার হিসেব দিতে যাওয়া বৃথা। দফাওয়ারি ফর্ম মেলে না । ছেলেবেলার কথা মনে আছে। পাড়াগায়ে মাছ ধরে, ডোঙা ঠেলে, নোঁকো বেয়ে দিন কাটে । বৈচিত্র্যের লোভে মাঝে যাত্রার দলের সাকরেী করি, তার আনন্দ ও আরাম যখন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন গামছা-কাধে নিরুদেশ যাত্রায় বার হই, ঠিক বিশ্বকবির কাব্যের নিরুদ্দেশযাত্রা নয়, একটু আলাদা । সেটা শেষ হলে আবার একদিন ক্ষতবিক্ষত পায়ে নিজীব দেহে ঘরে ফিরে আসি। আদরঅভ্যর্থনার পালা শেষ হলে, অভিভাবকের পুনরায় বিদ্যালয়ে চালান করে দেন। সেখানে আর একদফা সংবৰ্দ্ধনা-লাভের পর, আবার বোধোদয়-পদ্যপাঠে মনোনিবেশ করি, আবার একদিন প্রতিজ্ঞ ভূলি, আবার দুষ্ট সরস্বতী কাধে চাপে, আবার সাক্রেী শুরু করি, আবার নিরুদেশ-যাত্রা,—আবার ফিরে আসা, আবার তেমনি আদরআপ্যায়ন সংবৰ্দ্ধনার ঘট । এমনি করে বোধোদয়, পদ্যপাঠ ও বাঙলা জীবনের এক অধ্যায় শেষ হোলো এলাম সহরে । একমাত্র বোধোদয়ের নজিরে গুরুজনেরা ভৰ্ত্তি করেছিলেন ছাত্র-বৃত্তি ক্লাসে । তার পাঠ্য—সীতার বনবাস, চারুপাঠ, সম্ভাবশতক ও মস্ত মোট ব্যাকরণ। এ শুধু পড়ে যাওয়া নয়, মাসিক সাপ্তাহিকে সমালোচনা লেখা নয়, এ পণ্ডিতের কাছে মুখোমুখী দাড়িয়ে প্রতিদিন পরীক্ষা দেওয়া। স্বতরাং সসঙ্কোচে বলা চলে যে, সাহিত্যের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটলো চোখের জলে। তার পর বহু দুঃখে আর একদিন সে মিয়াদও কাটলো। তখন ধারণাও ছিল না যে, মাছুষকে দুঃখ দেওয়া ছাড়া সাহিত্যের আর কোন উদ্দেশু আছে। যে পরিবারে আমি মাহষ, সেখানে কাৰ্য উপন্যাস দুর্নীতির নামাজ, সঙ্গীত ●》8