পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভিন্ন রচনাবলী করিনে, কারণ তাদের কথা ষে সত্যি নয়, তা কোনমখেই জোৰ করে বলা চলে না। কিন্তু এর জন্তে আমার দুশ্চিন্তাও নেই। ষে কাল আজও আসেনি, সেই অনাগত ভবিষ্ণুতে আমার লেখার মূল্য থাকবে, কি থাকবে না, সে আমার চিন্তার অতীত। আমার বর্তমানের সত্যোপলব্ধি যদি ভবিস্তুতের সত্যোপলব্ধির সঙ্গে এক হয়ে মিলতে না পারে, পথ তাকে ত ছাড়তেই হবে। তার আয়ুষ্কাল যদি শেষ হয়েই যায়, সে শুধু এর জন্তেই যাবে যে, আরও বৃহৎ, আরও স্বন্দর, আরও পরিপূর্ণ সাহিত্যের কৃষ্টিকাৰ্ষ্যে তার কঙ্কালের প্রয়োজন হয়েচে। ক্ষোভ ন করে বরঞ্চ এই প্রার্থনাই জানাবো যে, আমার দেশে, আমার ভাষায় এতবড় সাহিত্যেই জন্মলাভ করুক ষার তুলনায় আমার লেখা যেন একদিন অকিঞ্চিৎকর হয়েই যেতে পারে। নানা অবস্থা-বিপৰ্য্যয়ে একদিন নানা ব্যক্তির সংশ্রবে আসতে হয়েছিল। তাতে ক্ষতি যে কিছু পৌছায়নি তা নয়, কিন্তু সে-দিন দেখা যাদের পেয়েছিলাম তারা সকল ক্ষতিই আমার পরিপূর্ণ করে দিয়েচে। তারা মনের মধ্যে এই উপলব্ধিটুকু রেখে গেছে, ক্রটি, বিচ্যুতি, অপরাধ, অধৰ্ম্মই মানুষের সবটুকু নয়। মাঝখানে তার যে বস্তুটি আসল মানুষ—তাকে আত্মা বলা যেতেও পারে – সে তার সকল অভাব, সকল অপরাধের চেয়েও বড়। আমার সাহিত্য-রচনায় তাকে যেন অপমান না করি । হেতু যত বড়ই হোক, মানুষের প্রতি মামুষের ঘূণা জন্মে যায়, আমার লেখা কোন দিন যেন না এতবড় প্রশ্রয় পায় । কিন্তু অনেকেই তা আমার অপরাধ বলে গণ্য করেচেন, এবং যে অপরাধে আমি সবচেয়ে বড লাঞ্জনা পেয়েচি, সে আমার এই অপরাধ। পাপীর চিত্র আমার তুলিতে মনোহর হয়ে উঠেচে, আমার বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় এই অভিযোগ । এ ভাল কি মন্দ আমি জানিনে, এতে মানবের কল্যাণ অপেক্ষা অকল্যাণ অধিক হয় কি না এ বিচার করেও দেখিনি—শুধু সে-দিন যাকে সত্য বলে অনুভব করেছিলাম তাকেই অকপটে প্রকাশ করেচি। এ সত্য চিরন্তন ও শাশ্বত কি না এ চিন্তা আমার নয়, কাল যদি সে মিথ্যা হয়েও যায়—তা নিয়ে কারো সঙ্গে আমি বিবাদ করতে যাবো না । এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা আমার সর্বদাই মনে হয় । হঠাৎ শুনলে মনে যা লাগে, তথাপি এ সত্য বলেই বিশ্বাস করি যে, কোন দেশের কোন সাহিত্যই কখনো নিত্যকালের হয়ে থাকে না। বিশ্বের সমস্ত স্থষ্ট বস্তুর মত তারও জন্ম আছে, পরিণতি আছে, বিনাশের ক্ষণ আছে। মামুষের মন ছাড়া তো সাহিত্যের দাড়াবার জায়গা নেই, মানব-চিত্তেই তো তার আশ্রয়, তার সকল ঐশ্বৰ্ষ্য বিকশিত হয়ে উঠে। মানব-চিত্তই ষে একস্থানে নিশ্চল হয়ে থাকতে পায় না। তার পরিবর্তন আছে, বিবর্তন আছে—তার রসবোধ ও সৌন্দৰ্য্য-বিচারের ধারার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের ve :e