পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰছ শেকড় গেড়ে বসেচে মা, নড়ায় সাধ্য কার ? অামাকে একদিন নিজে আশ্রয় দিয়ে এনেছিলেন বলে কেউ টলাতে পারেনি, কিন্তু মামাবাবুর একটা ভ্ৰকুটির ভার সইলো না, ছুটে পালাতে হলো। সত্যি বলি মা, রেণুর বিয়ে নিয়ে কাকাবাবুর সম্বন্ধে আমার মস্ত ভয় আছে । নতুন-বোঁ বিস্ফারিত চক্ষে চাহিয়া রছিলেন ! নিরুপায় নিফল আক্ৰোশে তাহার ' চোখ দিয়া যেন আগুনের স্রোত বহিতে লাগিল । রাখাল ইঙ্গিতে ব্ৰজবাবুকে দেখাইয়া বলিল, এখন হেমন্তবাবু বাড়ির কর্তা, তার মা হলেন গিন্নী । দাবানলের মধ্যে এই শাস্ত নিরীহ মানুষটাকে একলা ঠেলে দিয়ে আমার কিছুতেই ভয় ঘোচে না। অথচ পাগলের হাত থেকে রেণুকে বাচাতেই হবে। আজ আপনার মেয়ে, আপনার স্বামী বিপদে কুল-কিনারা পায় না মা, এ ভাবলেও আমার মাথা খুড়ে মরতে ইচ্ছে করে। নতুন-মা জবাব দিলেন না, শুধু সম্মুখের টেবিলের উপর ধীরে ধীরে মাথা রাখিয়া স্তন্ধ হইয়া রহিলেন । - তারক উত্তেজনায় ছট-ফট করিয়া উঠিল। সংসারে এত বড় নালিশ যে আছে ইহার পূৰ্ব্বে সে কল্পনাও করে নাই। আর ঐ নিৰ্ব্বাক, নিম্পন্দ পাষাণ-মূৰ্ত্তি—ক্তি কথা সে ভাবিতেছে। মিনিট দুই-তিন কাটিল, কে জানে আরও কতক্ষণ কাটিত—বাহির হইতে রুদ্ধস্বারে ঘা পড়িল। বুড়ি-বি মনে করিয়া রাখাল কপাট খুলিতেই একজন ব্যস্ত-ব্যাকুল বাঙালী চাকর ঘরে ঢুকিয়া পড়িল—ম ? নতুন-মা মুখ তুলিয়া চাহিলেন—তুই যে ? সে অত্যন্ত উত্তেজিত, কহিল, ড্রাইভার নিয়ে এলো মা। শীগগির চলুন, বাৰু ভয়ানক রাগ করচেন ! কথাটা সামান্তই, কিন্তু কদৰ্য্যতার সীমা রহিল না। ব্ৰজবাৰু লঙ্কায় আর একদিকে মূখ ফিরাইয়া রহিলেন। চাক্ষরটার বিলম্ব সহে না, তাগাদ দিয়া পুনশ্চ কহিল, উঠে পড়ুন মা, শীগগির চলুন। গাড়ি এনেচি । t কেন ? লোকটা ইতস্তত: করিতে লাগিল। স্পষ্টই বুঝা গেল বলিতে তাহার নিষেধ আছে। বাবু কেন ডাকচেন ? চলুন না মা, পথেই বলবো। আর তর্ক না করিয়া নতুন-মা উঠিয়া দাড়াইলেন, কহিলেন, চললাম মেজকর্তা । চললে ?