পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আরও একটা কাজ হবে বাবা—আর একবার তোমার কাকাবাবুর পায়ের ধূলো মাথায় নিয়ে আসতে পারবো | তাহার নিকট বিদায় লইয়া সে নীচে একবার সারদার ঘরটা ঘুরিয়া গেল, দেখিল ইতিমধ্যেই সে ছেলেদের কাছে কাগজ কলম চাহিয়া লইয়া নিবিষ্ট মনে হাতের লেখা পাকাইতে বসিয়াছে। রাখালকে দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া এ সকল সে লুকাইবার চেষ্টা করিল না, বরঞ্চ যথোচিত মৰ্য্যাদার সহিত তাহাকে তক্তপোষে বসাইয়া কহিল, দেখুন তো দেবতা, এতে আপনার কাজ চলবে ? সারদার হস্তাক্ষর যে এতখানি মুস্পষ্ট হইতে পারে রাখাল ভাবে নাই, খুশী হইয়া বারবার প্রশংসা করিয়া কহিল, এ আমার নিজের লেখার চেয়েও ভাল সারদা, আমাদের খুব কাজ চলে যাবে। তুমি যত্ন করে লেখা-পড়া শেখ, তোমার খাওয়া-পরার ভাবনা থাকবে না। হয়তো তুমিই কত লোকের খাওয়া-পরার ভার নেবে। শুনিয়া অকৃত্রিম আনন্দে মেয়েটির মুখ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। রাখাল মিনিট-তুই নিঃশবে চাহিয়া থাকিয়া পকেট হইতে একখানা দশ টাকার নোট বাহির করিয়া বলিল, টাকাটা তুমি কাছে রাথো সারদা, এ তোমারই। আমি এক বন্ধুর বিয়ে দিতে দিল্লী যাচ্চি, ফিরতে বোধ হয় দশ-বারো দিন দেরি হবে— এসে তোমার লেখা এনে দেবো—কি বলে ? কিছু ভেবো না—কেমন ? সারদা কহিল, আমার টাকার এখন দরকার ছিল না দেবতা—সে-ই এখনও খরচ হয়নি । তা হোক, তা হোক—এ টাকাও আপনিই শোধ হয়ে যাবে। যদি হঠাৎ আবশ্বক হয়, কার কাছে চাইবে বলে ? কিন্তু আমার জন্যে চিন্তা কোরো না যেন, আমি যত শীঘ্ৰ পারি চলে আসবো | এসেই তোমাকে লেখা দিয়ে যাবে। সারদার নিকট বিদায় লইয়া রাখাল তাহার মনিব-বাটতে উপস্থিত হইল, সেখানে কর্তা, গৃহিণী ও তাহাতে বহু বাদামুবাদের পর স্থির হইল, সমস্ত দলবল লইয়া তাহাকে রবিবার রাত্রির গাড়িতেই যাত্রা করিতে হইবে । গৃহিণী বলিয়া দিলেন, রাখাল, তোমার নিজের বন্ধু-বান্ধব কেউ যেতে চায় তো স্বচ্ছন্দে নিয়ে যেয়ো—সব খরচ তাদের। মনে রেখো, এ পক্ষের তুমিই কৰ্ত্ত, টাকা-কড়ি, গয়না-গাটি, জিনিসপত্র, সমস্ত দায়িত্ব তোমার । রাখালের সব্বাগ্রে মনে পড়িল তারককে । সে হসিয়ার লোক, তাহাকে সঙ্গে লইতে হইবে, বিনা খরচায় এ সুযোগ নষ্ট করা হবে না। কেবল একটা আশঙ্ক ছিল লোকটার এক-বোকা নৈতিক বুদ্ধিকে । সেখানে উচিত অস্থচিতের প্রশ্ন উঠিয়া পড়িলে তাহাকে রাজি করানো কঠিন হইবে। কিন্তু ইতিমধ্যে সে যে মাস্টারি 8*・