পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্ত কহিলাম, নাই শুনলে । রাজলক্ষ্মী ছেলেমানুষের মত মাথায় একটা ঝাকানি দিয়া কহিল, না বল। লোকে যে বলে আমি একেবারে বিস্ত্রী দেখতে হয়ে গেছি। সত্যি ? জামি গম্ভীর হইয়া কহিলাম, সত্যি। রাজলক্ষ্মী হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, তুমি মানুষকে এমনি অপ্রতিভ করে দাও যে-আচ্ছা, বেশ ত ! ভালই ত! শ্ৰী নিয়ে আমার কি-ই বা হবে! তোমার সঙ্গে আমার স্বতী-বিত্র দেখা-দেখি ত সম্পর্ক নয় যে সেজন্যে আমাকে ভেবে মরতে হবে । আমি বলিলাম, সে ঠিক, ভেবে মরবার কিছুমাত্র হেতু নেই। কারণ, একে ত লোকে ও-কথা বলে না, তা ছাড বললেও তুমি বিশ্বাস কর না । মনে মনে জানো যে— রাজলক্ষ্মী রাগ করিয়া বলিয়া উঠিল,তুমি অন্তৰ্য্যামী কিনা, তাই সকলের মনের কথা জেনে নিয়েচে ! আমি কখ খনো ও কথা ভাবিনে । তুমি নিজেই সত্যি করে বল ত, সেই শিকার করতে গিয়ে আমাকে যেমন দেখেছিলে, তেমনি কি এখনো দেখতে আছি, না কি ? তার চেয়ে কত কুচ্ছিত হয়ে গেছি। আমি কহিলাম, না, বরঞ্চ তার চেয়ে ভাল দেখতে হয়েচ। রাজলক্ষ্মী চক্ষের নিমিষে জানালার বাহিরে মুখ ফিরাইয়া বোধ করি তাহার হালি মুখখানি আমার মুগ্ধ দৃষ্টি হইতে সরাইয়া লইল, এবং কোন উত্তর না দিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। অনেকক্ষণ পরে পরিহাসের সমস্ত চিহ্ন মুখের উপর হইতে অপস্থত করিয়া ফিরিয়া চাহিল। জিজ্ঞাসা করিল, তোমার কি জর হয়েছিল ? ও দেশের আবহাওয়া কি সহ হচ্চে না ? কহিলাম, না হলে ত উপায় নেই। যেমন করে হোক সহ করিয়ে নিতেই হবে। আমি মনে মনে নিশ্চয় জানিতাম, রাজলক্ষ্মী এ কথার কি জবাব দিবে। কারণ, যে দেশের জল-বাতাস আজও আপনার হইয় উঠে নাই, কোন স্বৰূর ভবিষ্যতে তাহাকে আত্মীয় করিয়া লইবার আশায় নির্ভর করিয়া সে যে কিছুতেই আমার প্রত্যাবর্তনে সম্মত হইবে না, বরঞ্চ ঘোরতর আপত্তি তুলিয়া বাধা দিবে, ইহাই আমার মনে ছিল। কিন্তু সেরূপ হইল না, সে ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া মৃদুম্বরে বলিল, সে সত্যি। তা ছাড়া সেখানে আরো ত কত বাঙালী রয়েছেন। তাদের যখন সইচে, তখন তোমারই বা সইবে না কেন ? কি বল ? আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে তাহার এই প্রকার উদ্বেগহীনতা আমাকে আঘাত করিল। তাই শুধু একটা ইঙ্গিতে সায় দিয়াই নীরব হইয়া রহিলাম। একটা কথা আমি প্রায়ই ভাবিতাম, আমার প্লেগের কাহিনীটা কিভাবে রাজলক্ষ্মীর শুতিগোচর করিব। স্বদুর প্রবাসে আমার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিস্থলে যখন দিন 2&