পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কহিলাম, তারপর ছোড়াটাকে ধরে পেটের রোগে এবং স্বদেশী ম্যালেরিয়ার জরে। তখন বাপের দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশী কুইনিন ও বার্লির গুড়ো যোগানো, এবং মায়ের ঘাড়ে পড়ে—ঐ যে বললুম, আঁতুড়ে গিয়ে পুনরায় ভর্তি হবার মুলতুবির ফুরসতে—ঐগুলো খাটি দেশী জলে গুলে তাকে গেলানো। তারপরে যথাসময়ে স্থতিকাগৃহের হাঙ্গামা মিটিয়ে নবকুমার কোলে করে বেরিয়ে এসে প্রথমটার জন্যে দিন-কতক চাঁচানো। রাজলক্ষ্মী নীলবর্ণ হুইয়া কহিল, চ্যাচানো কেন ? বলিলাম, ওটি মায়ের স্বভাব বোলে। এমন কি কেরানীর ঘরেও তার অন্যথা দেখা যায় না, যখন ভগবান তাব দায়িত্ব শোধ করতে ছেলেটাকে শ্ৰীচরণে টেনে নেন । বাছা রে! এতক্ষণ বাহিরের দিকে চাহ্যিাই কথা কহিতেছিলাম, অকস্মাৎ দৃষ্টি ফিরাইতে দেখিলাম, তাহার বড় বড় দুইটি চক্ষু অশ্রুজলে ভাসিতেছে। অতিশয় ক্লেশ বোধ করিলাম। মনে হইল, এ বেচারীকে নিরর্থক দুঃখ দিয়া আমার লাভ কি ? অধিকাংশ ধনীর মত ইহারও না হয় জগতের এই বিবাট দুঃখের দিকটা অগোচরেই থাকিত। বাঙলার ক্ষুদ্র চাকুরিজীবী প্রকাও দরিদ্র গৃহস্থ পবিবার যে শুধু খাদ্যাভাবেই ম্যালেরিয়া, ওলাওঠা প্রভৃতি উপলক্ষ করিয়া প্রতিদিন শূন্ত হইয়া যাইতেছে, অন্যান্য বডলোকের মত এও না হয় এ কথাটা নাই জানিত । কি এমন তাহাতে বেশী ক্ষতি হইত। ঠিক এমনি সময় রাজলক্ষ্মী চোখ মুছিতে মুছিতে অবরুদ্ধ স্বরে হঠাৎ বলিয়া উঠিল, হোক কেরানী, তবু তারা তোমার চেয়ে ঢের ভাল ! তুমি ত পাষাণ। তোমার নিজের কোন দুঃখ নেই বলে এদের দুঃখকষ্ট এমন আহলাদ করে বর্ণনা করচ। আমার কিন্তু বুক ফেটে যাচ্ছে। বলিয়া সে অঞ্চলে ঘন ঘন চোখ মুছিতে লাগিল। ইহার প্রতিবাদ করিলাম না। কারণ তাহাতে লাভ হইত না। ববঞ্চ সবিনয়ে কহিলাম, এদের মুখের ভাগটাও ত আমার কপালে জোটে না। বাড়ি পৌছতে এদের জাগ্রহটাও ভেবে দেখবার বিষয় । রাজলক্ষ্মীর মুখ হাসি ও কান্নায় মুহূর্তেই দীপ্ত হইয়া উঠিল, আমিও ত তাই বলচি ! আজ বাবা আসচে বলে ছেলে-পুলের সব পথ চেয়ে আছে। কিসের কষ্ট ? ওঁদের মাইনে হয়ত কম, তেমনি বাবুয়ানিও নেই। কিন্তু, তাই বলে কি পচিশত্ৰিশ টাকা, এত কম ? কখখনো নয়। অন্তত:—একশ-দেড়শ টাকা, আমি নিশ্চয় বলচি । বললাম, হতেও পারে। আমি হয়ত ঠিক জানিনে। উৎসাহ পাইয়া রাজলক্ষ্মীর লোভ বাডিয়া গেল। অতিশয় ক্ষুদ্র কেরানীর জন্যও S• H