পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাপ্ত পিয়ারী কহিল, তুমি জ্ঞানী লোক, তুমি আমার ঠিক অবস্থা বুঝবে না ত বুঝবে কে? যাক, বাঁচলুম! বলিয়া সে একটা দীর্ঘশ্বাস চাপিয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিল, হঠাৎ আসার সত্যি কারণটা শুনতে পাইনে কি ? বলিলাম, প্রথম কারণটা শুনতে পাবে না, কিন্তু দ্বিতীয়টা পাবে । প্রথমটা পাব না কেন ? অনাবশ্যক ব’লে । আচ্ছা, দ্বিতীয়টা শুনি । আমি বৰ্ম্মায় যাচ্ছি। হয়ত আর কখনো দেখা হবে না। অন্ততঃ অনেক দিন যে দেখা হবে না, সে নিশ্চয়। যাবার আগে একবার দেখতে এলুম। রতন ঘরে ঢুকিয়া বলিল, বাবু, আপনার বিছানা তৈরি হয়েছে, আমুন! খুশী হইয়া কহিলাম, চল । পিয়ারীকে বলিলাম, আমার ভারী ঘুম পাচ্চে । ঘণ্টাখানেক পরে যদি সময় পাও ত একবার নীচে এসো – আমার আরও কথা আছে, বলিয়া রতনের সঙ্গে বাহির হইয়া গেলাম । পিয়ারীর নিজের শোবার ঘরে অানিয়া রতন যখন আমাকে শয্যা দেখাইয়া দিল, তখন বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না। বলিলাম, আমার বিছানা নীচের ঘরে না ক’রে এ ঘরে করা হ’ল কেন ? রতন আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, নীচের ঘরে ? আমি বলিলাম, সেই রকমই ত কথা ছিল ! সে অবাক হইয়া ক্ষণকাল আমার পানে চাহিয়া থাকিয়া শেষে বলিল, আপনার বিছানা হবে নীচের ঘরে ? আপনি কি যে তামাশা করেন বাৰু! বলিয়া হাসিয়া চলিয়া যাইতেছিল—আমি ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমার মনিব শোবেন কোথায় ? বৃতন কহিল, বন্ধুবাবুর ঘরে তার বিছানা ঠিক করে দিয়েছি। কাছে আসিয়া দেখিলাম, এ সেই রাজলক্ষ্মীর দেড়-হাত চওড়া তক্তাপাশের উপর বিছানা পাতা হয় নাই। একটা মস্ত থাটের উপর মস্ত পুরু গদি পাতিয়া রাজশয্যা প্রস্তুত হইয়াছে। শিয়রের কাছে একটা ছোট টেবিলের উপর সেজের মধ্যে বাতি জলিতেছে । একধারে কয়েকখানি বাঙলা বই, অন্যধারে একটা বাটির মধ্যে কতকগুলি বেলফুল। চোখ চাহিবামাত্র টের পাইলাম, এর কোনটাই ভূত্যের হাতে তৈরি হয় নাই—যে বড় ভালবাসে, এসব তাহারই স্বহস্তে-প্রস্তুত । উপরের চাদরখানি পৰ্য্যস্ত যে রাজলক্ষ্মী নিজের হাতে পাতিয়া রাগিয়া গেছে, এ যেন নিজের অস্তরের ভিতর হইতে অনুভব করিলাম । مه আজ ওই লোকটার সম্মুখে আমার অচিন্ত্যপূৰ্ব্ব অভ্যাগমে রাজলক্ষ্মী হতবুদ্ধি & س: