পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐক্যম্ভ গৈছে। টানাটানি করিতে, সে রুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিল, আগে আমার দু-তিনটে কথার জবাব দাও, তবে আমি উঠব! কি কথা বল ? - 輸 আগে বল, ও লোকটা এখানে থাকাতে তুমি আমাকে কোন মন্দ মনে করনি? না | পিয়ারী আবার একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, কিন্তু আমি যে ভাল নই, সে ত তুমি জানো? তবে কেন সন্দেহ হয় না ? প্রশ্নটা অত্যন্ত কঠিন। সে যে ভাল নয়, তাও জানি, সে যে মন্দ এও ভাবিতে পারি না ? চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। হঠাৎ সে চোখ মুছিয়া ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, আচ্ছা, জিজ্ঞেস করি তোমাকে, পুরুষমাহুষ যত মন্দই হয়ে যাক, ভাল হতে চাইলে তাকে ত কেউ মানা করে না ; কিন্তু আমাদের বেলাই সব বন্ধ কেন ? অজ্ঞানে, অভাবে পড়ে একদিন যা করেচি, চিরকাল আমাকে তাই করতে হবে কেন ? কেন আমাদের তোমরা ভাল হতে দেবে না ? আমি বলিলাম, আমরা কোনদিন মানা করি নে। আর করলেও সংসারে ভাল হবার পথ কেউ কারো আটকে রাখতে পারে না । পিয়ারী অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত চুপ করিয়া আমার মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া শেষে ধীরে ধীরে বলিল, বেশ । তা হ’লে তুমিও আটকাতে পারবে না। আমি জবাব দিবার পূৰ্ব্বেই রতনের কাসির শব্দ দ্বারের কাছে শুনিতে পাওয়া গেল । - পিয়ারী ডাকিয়া কহিল, কি রে রতন ? রতন মুখ বাড়াইয়া বলিল, মা, রাত্রি ত অনেক হ’ল—বাবুর খাবার নিয়ে আসবে না ? বামুনঠাকুর ঢুলে ঢুলে রান্নাঘরেই ঘুমিয়ে পড়েচে । তাই ত, তোমাদের কারুর যে এখনো খাওয়া হয়নি, বলিয়া পিয়ারী ব্যস্ত এবং লজ্জিত হইয়া দাড়াইল । আমার খাবারটা সে বরাবর নিজের হাতেই লইয়া আসিত ; আজও আনিবার জন্য দ্রুতপদে চলিয়া গেল । - আহার শেষ করিয়া যখন বিছানায় শুইয়া পড়িলাম, তখন রাত্রি একটা বাজিয়া গেছে। পিয়ারী আসিয়া আবার আমার পায়ের কাছে বসিল । বলিল, তোমার জন্যে অনেক রাত্রি একলা জেগে কাটিয়েচি—আজি তোমাকেও জাগিয়ে রাখব। বলিয়া সম্মতির জন্যে অপেক্ষামাত্র না করিয়া আমার পায়ের বালিশটা টানিয়া লইয়া বঁ হাতটা মাথায় দিয়া আড় হইয়া পড়িয়া বলিল, আমি অনেক ভেবে দেখলুম, তোমার অত দূরদেশে যাওয়া কিছুতেই হতে পারে না। X >