পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হইল এবং পরমুহূর্তেই তাহার ক্রোধের বহি যেন ব্রহ্মরন্ধ ভেদ করিয়া জলিয়া উঠিল। ভাবিল, ও-বাড়িতে ছুটিয়া গিয়া যা মুখে আসে তাই বলিয়া বেণীকে গালাগালি করিয়া আসে ; কারণ, যে লোক মাকে এমন করিয়া অপমান করিতে পারে তাঁহাকেও অপমান করা সম্বন্ধে কোনরূপ বাছ-বিচার করিবার আবস্তকতা নাই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হইল, তাহ হয় না। কারণ, জ্যাঠাইমার অপমানের মাত্রা তাহাতে বাড়িবে বৈ কমিবে না । সেদিন দীমুর কাছে এবং কাল মাস্টারের মুখে শুনিয়া রমার প্রতি তাহার ভারী একটা শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়াছিল। চতুর্দিকে পরিপূর্ণ মূঢ়তা ও সহস্র প্রকার কদর্ষ্য ক্ষুদ্রতার ভিতরে এক জ্যাঠাইমার হৃদয়টুকু ছাড়া সমস্ত গ্রামটাই আঁধারে ডুবিয়া গিয়াছে বলিয়া যখন তাহার নিশ্চয় বিশ্বাস হইয়াছিল, তখন এই মুখুয্যে-বাটীর পানে চাহিয়া একটুখানি আলোর আভাস—তাহা যত তুচ্ছ এবং ক্ষুদ্র হোক—তাহার মনের মধ্যে বড় আনন্দ দিয়াছিল। কিন্তু আবার এই ঘটনায় তাহার বিরুদ্ধে সমস্ত মন ঘৃণায় বিতৃষ্ণায় ভরিয়া গেল। বেণীর সঙ্গে যোগ দিয়া এই দুই মাসী ও বোনবিতে মিলিয়া যে অন্যায় করিয়াছে, তাহাতে তাহার বিন্দুমাত্র সংশয় রহিল না। কিন্তু এই দুইটা স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে বা সে কি করিবে এবং বেণীকেই বা কি করিয়া শান্তি দিবে তাহাও কোনমতে ভাবিয়া পাইল না। এমন সময়ে একটা কাণ্ড ঘটিল। মুখুয্যে ও ঘোষালদের কয়েকটা বিষয় এখন পৰ্য্যন্ত ভাগ হয় নাই। আচাৰ্য্যদের বাটীর পিছনে ‘গড়’ বলিয়া পুষ্করিণীটাও এইরূপ উভয়ের সাধারণ সম্পত্তি। এক সময়ে ইহা বেশ বড়ই ছিল , ক্রমশঃ সংস্কার অভাবে বুজিয়া গিয়া এখন সামান্ত একটা ডোবায় পরিণত হইয়াছিল। ভাল মাছ ইহাতে ছাড়া হইত না । কই, মাগুর প্রভৃতি যে-সকল মাছ আপনি জন্মায়, তাহাই কিছু ছিল । ভৈরব ইপিাইতে কাপাইতে আসিয়া উপস্থিত হুইল । বাহিরে চণ্ডীমণ্ডপের পাশের দ্বয়ে গোমস্ত গোপাল সরকার খাত লিখিতেছিল, ভৈরব ব্যস্ত হইয়া কহিল, সরকারমশাই, লোক পাঠাননি ? গড় থেকে মাছ ধরানো হচ্ছে যে ! সরকার কলম কানে ও জয় মুখ তুলিয়া প্রশ্ন করিল, কে ধরাচ্ছে ? আবার কে ? বেণীবাবুর চাকর দাড়িয়ে আছে, মুখুয্যেদের খোটা দরোয়ানটাও আছে দেখলুম ; নেই কেবল আপনাদের লোক। শীগগির পাঠান। গোপাল কিছু মাত্র চাঞ্চল্য প্রকাশ করল না, আমাদের বাবু মাছ-মাংস খান না । ভৈরব কহিল, নাই খেলেন, কিন্তু ভাগের ভাগ নেওয়া চাই ত ! গোপাল বলল, আমরা পাঁচজন ত চাই, বাবু বেঁচে থাকলে তিনিও তাই চাইতেন। কিন্তু রমেশবাবু একটু আলাদা ধরনের। বলিয়া ভৈরবের মুখে বিস্ময়ের চিহ্ন দেখিয়া, সহাস্তে একটুখানি শ্লেব করিয়া কহিল, এ ত তুচ্ছ দুটো সিঞ্জিমাগুর ኃ♥ß