পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পা বাড়াইবার উদযোগ করিতেছি, পিয়ারী চোখের জলের ভিতর দিয়া আমার মুখপানে চাহিয়া একটু হাসিল ; কহিল, কোথায় যাচ্ছ—আর হয়ত দেখা হবে না—একটা ভিক্ষা দেবে ? বলিলাম, দেব। পিয়ারী কহিল, ভগবান না করুন, কিন্তু তোমার জীবনযাত্রার যে ধরন, তাতে— আচ্ছা যেখানেই থাকে, সে সময়ে একটা খবর দেবে ? লজ্জা করবে না ? না, লজ্জা করব না—খবর দেব, বলিয়া ধীরে ধীরে গাড়িতে গিয়া উঠিলাম। পিয়ারী পিছনে পিছনে আসিয়া আজ তাহার অঞ্চলপ্রান্তে আমার পায়ের ধূলা अझेल । ওগো, শুনচ ? মুখ তুলিয়া দেখিলাম, সে তাহার ওষ্ঠাধরের র্কাপুনিটা প্রাণপণে দমন করিয়া কথা কহিবার চেষ্টা করিতেছে। উভয়ের দৃষ্টি এক হইবামাত্রই তাহার চোখের জল আবার কর ঝর করিয়া করিয়া পড়িল ; অস্ফুট অবরুদ্ধ স্বরে চুপিচুপি বলিল, নাই গেলে অভ্যত দূরে ? থাক গে, যেও না! নিশন্ধে চোখ ফিরাইয়া লইলাম। গাড়োয়ান গাড়ি ছাড়িয়া দিল। চাবুক ও চারখানা চাকার সম্মিলিত সপাসপ ও ঘড়ঘড় শব্দে অপরাহ্লবেলা মুখরিত হইয়া উঠিল। কিন্তু সমস্ত চাপা দিয়া একটা ধরা গলার চাপা কান্নাই শুধু আমার কানে বাজিতে লাগিল । Vo দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন ভোরবেলায় একটা লোহার তোরঙ্গ এবং একটা পাতলা বিছানামাত্র অবলম্বন করিয়া কলিকাতার কয়লাঘাটে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। গাড়ি হইতে নামিতে না-নামিতে, এক থাকি-কুৰ্বি-পরা কুলি আসিয়া এই দুটাকে ছো মারিয়া লইয়া কোথায় যে চক্ষের পলকে অস্তদ্ধান হইয়া গেল, খুজিতে খুজিতে দুশ্চিন্তায় চোখ ফাটিয়া জল না আসা পর্য্যন্ত, আর তাহার কোন সন্ধানই পাওয়া গেল না । গাড়িতে আসিতে আসিতেই দেখিয়াছিলাম, জেটি ও বড় রাস্তার অন্তর্বত্তী সমস্ত ভূখণ্ডটাই নানা রঙ্গের পদার্থে বোঝাই হইয়া আছে। লাল, কালো, পাণ্ডটে, গেরুয়া—একটু কুয়াসা করিয়াও ছিল—মনে হইল একপাল বাছুর বোধ হয় বাধা আছে, চালান যাইবে । কাছে আসিয়া ঠাহর করিয়া দেখি, চালান যাইবে বটে কিন্তু বাছুর নয়-মানুষ । মোট-ঘাট '3's