পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিরাজ হঠাৎ রাগিয়া উঠিয়া বলিল, আমি কি জানি ? বলিয়াই দ্রুতপদে সরিয়া গেল । তাহার ভাল দেখিয়া নীলাম্বর অবাক হইযা গেল। কিন্তু সেইদিন হইতে বিরাজ যখন তখন জল আনিতে যাওয়া একেবাবে বন্ধ করিয়া দিল। হয় অতি প্রত্যুযে, না হয় একটুখানি রাত্রি হইলে তবে সে নদীতে যাইত, এ ছাড়া সহস্র কাজ আটকাইলেও সে ও-মুখো হইত না। কিন্তু ভিতবে ভিতবে ঘৃণায, লজ্জায়, ক্ৰোধে, তাহার প্রাণ যেন বাহির হইয়া যাইতে লাগিল । অথচ এই অত্যাচাব ও অকথ্য ইতরতার বিরুদ্ধে সে স্বামীর কাছেও সাহস করিয়া মুখ খুলিতে পারিল না । দিন-চারেক পরে নীলাম্বরই একদিন ঘাট হটতে হাসিয়৷ আসিযা বলিল, নূতন জমিদারের সাজ-সবঞ্জাম দেখেচিস্ বিরাজ ? বিরাজ বুঝিতে পারিয। অন্যমনস্কভাবে বলিল, দেখেচি বৈকি । নীলাম্বব পুনবায় হাসিতে হাদিতে বলিল, লোকটা পাগল না কি, তাই আমি ভাবচি। নদীতে দুটো পুটিমাছ থাকবাব জল নেই, লোকটা সকাল থেকে একটা মস্ত হুইল-বাধা ছিপ ফেলে সারাদিন বসে আছে। বিরাজ চুপ কবিয বহিল, সে কোনমতেই স্বামীর হাসিতে যোগ দিতে পারিল না। নীলাম্বর বলিতে লাগিল, কিন্তু এ ত ঠিক নয। ভদ্রলোকের খিড়কির ঘাটের সামনে সমস্ত দিন বসে থাকলে মেযেছেলেরাষ্ট বা যায় কি কবে ? আচ্ছা, তোদের নিশ্চযক্ট ত ভারী অস্ববিধে হচ্ছে ? বিরাজ বলিল, হলেই বা কি কবব ? নীলাম্বব ঈষৎ উত্তেজিত হইয়া বলিল, তাহ হবে কেন ? ছিপ নিযে পাগলামি করবাব কি আর জায়গা নেই? না, না, কাল সকালেহ আমি কাছারিতে গিয়ে বলে আসব-—শখ হয উনি আর কোথাও ছিপ নিয়ে বসে থাকুন গে , কিন্তু আমাদের বাড়ির সামনে ও সব চলবে না। স্বামীর কথা শুনিয়া বিরাজ ভীত হইযা উঠিল, ব্যস্ত হইয়া বলিল, না, না, তোমাকে ও-সব বলতে যেতে হবে না , নদী আমাদেব একলাব নয় যে, তুমি বারণ করে আসবে। নীলাম্বব বিন্মিত হইয়া বলিল, তুই বলিস কি বিবাজ । নাই হ’ল নদী আমার , কিন্তু লোকের একটা ভালমন্দ বিবেচনা থাকবে না ? আমি কালই গিয়ে বলে আসব, না শোনে নিজেই ঐ সকল ঘাট-ফট টান মেরে ভেঙ্গে ফেলব, তার পরে যা পারে, সে করুক। কথা শুনিয়া বিরাজ স্তম্ভিত হইয়া গেল। তাব পর ধীরে ধীরে বলিল, তুমি যাবে জমিদারের সঙ্গে বিবাদ করতে ?

ግbዎ