পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজ-বে। ব্যাপারটা তাহার কাছে গভীর অত্যাচার ও অবিচার বলিয়াই মনে হইতে লাগিল । খানিকপরে বিরাজ বলিল, পুটি, অনেকক্ষণ দেখিনি রে, তোর দাদাকে একবার ডাক। নীলাম্বর আড়ালেই ছিল, আসিতেই ছোটবে বিছানা ছাড়িয়া সরিয়া দাড়াইল। নীলাম্বর শিয়রে বসিয়া স্ত্রীর ডান হাতটা সাবধানে নিজের হাতে তুলিয়া নাড়ী দেখিতে লাগিল। সত্যই বিরাজের আর কিছু ছিল না। সে যে জরের উপর এত কথা বলিতেছে এবং ইহারই অবসানের সঙ্গে খুব সম্ভব সমস্তই শেষ হইবে, তাহা সে পূৰ্ব্বেই অল্পমান করিয়াছিল, এখন তাহাই বুঝিল । বিরাজ বলিল, বেশ হাত দেখ, বলিয়াই হাসিল। সহসা সে মৰ্ম্মান্তিক পরিহাস করিয়া ফেলিল। এই উপলক্ষ করিয়াই যে এত কাও খটিয়াছে, তাহা সকলেরই মনে পড়িয়া গেল। বেদনায় নীলাম্বরের মুখ বিবর্ণ হইয়া গিয়াছে, বিরাজও বোধ করিয়া তাহ দেখিতে পাইল । সে তৎক্ষণাৎ অমৃতপ্ত হইয়া বলিল, না, না, তা বলিনি—সত্যিই বলচি, আর কত দেরি ? বলিয়া চেষ্টা করিয়া নিজের মাথা স্বামীর ক্রোড়ে তুলিয়া বলিল, সকলের স্বযুখে আর একবার তুমি বল, আমাকে মাপ করেচ ? নীলাম্বর রুদ্ধস্বরে ‘করেচি’ বলিয়া হাত দিয়া চোখ স্মৃছিল। বিরাজ ক্ষণকাল চোখ বুজিয়া থাৰিয়া মৃদুকণ্ঠে বলিতে লাগিল, জ্ঞানে, অজ্ঞানে এতদিনের ঘরকল্পায় কতই না দোষ-ঘাট করেচি—ছোটবে, তুমিও শোন, পুটি, তুইও শোন দিদি, তোমরা সব ভুলে আজ আমাকে বিদেয় দাও—আমি চয়ুম। বলিয়া সে হাত বাড়াইয়া স্বামীর পদতল খুজিতে লাগিল। নীলাম্বর মাথায় বালিশটা এৰ পাশে সরাইয়া দিয়া উপরে পা তুলিতেই বিরাজ হাত দিয়া ক্রমাগত পায়ের ধূলা মাৰায় দিতে দিতে বলিল, আমার সব দুঃখ এতদিনে সার্থক হল—আর কিছু নেই। দেহ আমার শুদ্ধ নিষ্পাপ - এইবার যাই, গিয়ে দাড়িয়ে থাকি গে। বলিয়া সে পাশ ফিরিয়া ক্রোড়ের মধ্যে মুখ গুজিয়া অফুটম্বরে কহিল, এমনই করে জামাকে নিয়ে থাক, কোথাও ধেও না, বলিয়া সে নীরব হইল। সে শ্রাত্ত হইয়া পড়িয়াছিল। সকলেই শুল্কমুখে বসিয়া রহিল। রাত্ৰি বারোটার পর হইতে সে ভুল বৰিতে লাগিল। নদীতে বাপাইয়া পড়ার কথা—হাসপাতালের কথা –নিরুদ্দেশ পথের কথা, কিন্তু সব কণার মধ্যে অতু গ্র একাগ্র পতিপ্রেম। মুহুর্তের ভ্রমে কি করিয়া সে সতীসাধীকে দগ্ধ করিয়াছে শুধুই ভাই । এ কয়দিন তাহারই স্বযুখে বসিয়া নীলাম্বরকে জাহার করিতে হইত ; সেদিন মাঝে মাঝে সে পৃটিকে ডাকিয়া ছোটবোঁকে ডাকি ৰিতে লাগিল। তারপর তোরবেলায় সমস্ত ডাকাডাকি দমন করিয়া দীর্ঘশ্বাস উঠি শার সে চাছিল না, আর সে কৰা কছিল না, স্বামীর দেহে মাথা রাখিয়া স্বর্ষে - সঙ্গে সঙ্গেই দুঃখিনীর সমস্ত দুঃখের অবসান হইবা গেল। veభి