পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নব-বিধান শৈলেশ চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। গাষ্ঠীতে বিভা কাহারও সহিত একটা কথাও কহিল না, তাহার দুচক্ষু বাছিয়া ছ-ৰ করিয়া জল পড়িতে লাগিল। একটা কথা তাহারা নিঃসংশয়ে বুৰিয়া আসিলেন, ও-বাড়িতে র্তাহাদের আর স্থান নাই। দাদা বা-ই কেন না করুক, সোমেনকে সে জোর করিয়া কাড়িয়া আনিবে বলিয়া বিভা স্বামীর কাছে প্রতিজ্ঞ করিয়াছিল। মেহের সেই দাম্ভিক উক্তি স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই বার বার মনে পড়িল, কিন্তু নিদারুণ লজ্জায় ইহার আভাস পর্য্যন্তও কেহ উচ্চারণ করিতে পারিল না। ইহার পর মাসাধিক-কাল গত হইয়াছে। ইতিমধ্যে কথাটা আত্মীয় ও পরিচিত বন্ধু-সমাজে এমন আবর্তের স্বষ্টি করিয়াছে যে, লোকে সত্যের মধ্যেও আর ধেন আবদ্ধ থাকিতে চাহে না । মুখে মুখে অতিরঞ্জিত ও পল্লবিত হইয়া সমস্ত জিনিসটা এমন কুৎসিত আকার ধারণ করিয়াছে যে কোথাও যাওয়া আসাও বিভার অসঙব• হইয়া উঠিয়াছে, অথচ কোনদিকে কোন রাস্তাই কাহারও চোখে পড়িতেছে না। ক্ষেত্রমোহন জানিতেন, সংসারে অনেক উত্তেজনাই কালক্রমে স্নান হইয়া আসে, ধৈৰ্য্য ধরিয়া স্থির হইয়া থাকাই তাহার উপায়, শুধু এই পরকালের লোভের ব্যবসাটাই একবার শুরু হইয়া গেলে আর সহজে থামিতে চাহে না । অনিশ্চিতের পথে এই অত্যন্ত সুনিশ্চিতের আশাই মানুষকে পাগল করিয় যেন নিরস্তর ঠেলা দিয়া চালাইতে থাকে। ইহার উপরেও প্রচণ্ড বিভীষিকা উষা । বন্ধু ও শত্রুভাবে সৰ্ব্বনাশের বনিয়াদ গড়িয়া গেছে সে-ই । কোনমতে একটা খবর পাইয়। যদি আসিয়া পড়ে ত অমিষ্টের বাকী কিছু আর থাকিবে না। কেবল বিভাই নয়, তাহার উল্লেখে উমার, এমনকি ক্ষেত্রমোহনেরও আজকাল গা জলিতে থাকে। বাস্তবিক তাহাকে না জানিলে ত এ বালাই কোনদিনই ঘটার সম্ভাবনা ছিল না। 劇 আজ রবিবারে সকালবেলা স্বামী-স্ত্রীতে আসিয়া এই আলোচনাই করিতেছিল। সেই অপমানিত হইয়া ফিরিয়া আসার দিন হইতে ইহার সে-মুখোও আর হন নাই, কিন্তু সে বাড়ির খবর পাইতে বাকী থাকিত না । গুরুভ্রাতার দল অদ্যাবধি নড়িবার নামটি পৰ্য্যস্ত যুধে আনেন না এবং ঐগুরু ও গোসাই-ঠাকুরানী উপরের ঘরে তেমনি কায়েম হইয়া বিরাজ করিতেছেন। সকাল-সন্ধ্যায় নামকীৰ্ত্তন অব্যাহত চলিয়াছে, ভোগাদির ব্যবস্থাও উত্তরোত্তর শ্ৰীবৃদ্ধি লাভ করিতেছে, এ-সকল সংবাদ বন্ধুজনের মুখে নিয়মিতভাবেই বিভার কানে পৌঁছে ; কেবল অতিরিক্ত একটা কৰা সম্প্রতি শোনা গিয়াছে যে, গ্ৰীধাম নবদ্বীপে একটা জায়গা লইয়া শৈলেশ গুরুদেবের আশ্রম তৈরি করার সঙ্কল্প করিয়াছে এবং এই হেতু অনেক টাকা ধার করিবার চেষ্টা করিয়া বেড়াইতেছে। A O)