পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাপ্ত ভাল ঘর যোগাড় করে আপনাদের দুজনের বিছানা তৈরী করে দিতে হবে, রান্ন করে যা হোক দুটাে দুজনকে খাইয়ে দিয়ে তবে ত আমার ছুটি হবে, তবে ত একটু বসতে পাবো। না না, মাথা খান, উঠবেন না ; আমি এক্ষুনি সমস্ত ঠিকঠাক করে দিচ্চি। একটু হাসিয়া কহিল, ভাবচেন, মেয়েমানুষ হয়ে এক এ সব যোগাড় করব কি করে, না ? তাৱৈ কি ! আপনাদের যোগাড় করেছিল কে ! মে আমি না আর কেউ ? বলিয়া সে ছোট বাক্সটি খুলিয়া গুটিকয়েক টাকা আঁচলে বাধিয়া লইয়া কেরেণ্টিনের অফিস-ঘরের দিকে চলিয়া গেল । সে পারুক আর না পারুক, আমি ত আপাতত: বসিতে পাইয়া বঁচিয়া গেলাম। আধঘণ্টার মধ্যে একজন চাপরাসী আমাদের ডাকিতে আসিল । রোহিণীকে লইয়া তাহার সঙ্গে গিয়া দেখিলাম, ঘরটি ভালই বটে। মেমসাহেব-ডাক্তার নিজে দাড়াইয়া লোক দিয়া সমস্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করাইতেছেন, জিনিসপত্র আসিয়া পৌঁছিয়াছে, দুখানি খাটিয়ার উপর দুজনের বিছানা পর্য্যন্ত তৈরী হইয়া গিয়াছে। এক ধারে নূতন হাড়ি, চাল, ডাল, আলু, ঘি, ময়দা, কাঠ সমস্তই মজুত। মাদ্রাজী ডাক্তারের সঙ্গে অভয়া ভাঙ্গ হিন্দীতে কথাবার্তা চালাইতেছে। আমাকে দেখিতে পাইয়া কহিল, ততক্ষণ একটু শুয়ে পড়ুন গে, আমি মাথায় দু'ঘটি জল ঢেলে নিয়ে এ-বেলার মত চারটি চালে-ডালে খিচুড়ি বেঁধে নিই। ও-বেলা তখন দেখা যাবে। বলিয়া গামছা এবং কাপড় লইয়া মেমসাহেবকে সেলাম করিয়া একজন খালাসীকে সঙ্গে করিয়া স্নান করিতে চলিয়া গেল। অতএব ইহারই অভিভাবকতায় এখানের দিনগুলি যে আমাদের ভালই কাটিয়াছিল, তাহ বলায় নিশ্চয় বিশেষ কিছু অত্যুক্তি করা হয় নাই । এই অভয়াতে আমি দুটো জিনিস শেষ পর্য্যন্ত লক্ষ্য করিয়াছিলাম। এরূপ অবস্থায় নিঃসম্পৰ্কীয় নর-নারীর ঘনিষ্ঠত স্বতঃই দ্রুত অগ্রসর হইয়া যায় ; কিন্তু ইহা সে কোনদিন ঘটিবার স্থযোগ দেয় নাই। ইহার ব্যবহারের মধ্যে কি যে একটা ছিল, তাহা প্রতিক্ষণেই স্মরণ করাইয়া দিত, আমরা এক-জায়গার যাত্রী মাত্র। কাহারও সহিত কাহারও সত্যকার সম্বন্ধ নাই—দুদিন পরে হয়ত সারা জীবনের মধ্যেও আর কখন কাহারও সহিত সাক্ষাৎ ঘটিবে না। আর এমন আনন্দের পরিশ্রমও কখনও দেখি নাই। সারাদিন আমাদের সেবার জন্যই ব্যস্ত, সমস্ত কাজ নিজেই করিতে চায়। সাহায্য করিবার চেষ্টা করিলেই হাসিয়া বলিত, এ ত সমস্তই আমার নিজের কাজ। নইলে রোহিণীদাদারই বা এ কষ্টের কি আবখ্যক ছিল, আপনারই বা কি মাথা-ব্যথা পড়েছিল এই জেলখানায় আসতে। আমার জন্যেই ত আপনাদের এত দুঃখ । i. হয়ত খাওয়া-দাওয়ার পরে একটু গল্প হইতেছে, অফিসের ঘণ্টায় দুটা বাজিতেই \:3