পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ সহাস্তে কহিলেন, ফ্রেঞ্চ লিভ মশাই, ফ্রেঞ্চ লিভ—এ আর বুঝলেন না ? অত্যন্ত ক্লেশ বোধ হইল ; কহিলাম, মেয়েটি ত তা হলে ভারি কষ্ট পাবে ? আমার কথা শুনিয়া দাদা ত একেবারে হাসিয়াই আকুল। কোনমতে হাসি থামিলে, বলিতে লাগিলেন, শোন কথা একবার! বৰ্ম্ম-বেটীদের আবার কষ্ট ! এ শালার জেতের লোক খেয়ে জাচায় না—না আছে এটোকাটার বিচার, না আছে একটা জাত-জন্ম। বেটীরা সব নেল্পী (এক প্রকাব পচা মাছ যাহাকে ণ্ডাপি বলে) খায়, মশাই নেল্পী খায় ! গন্ধের চোটে ভূত-পেত্নী পালায়। এ ব্যাটা-বেটীদের আবার কষ্ট ! একটা যাবে, আর একটা পাকড়াবে— ছোটজাত ব্যাটারা— থামুন মশাই, থামুন, আপনার ভাইটিকে যে এই চার বছর ধ’রে রাজার হালে খাওয়াচ্চে, পরাচ্চে, আর কিছু না হোক, তারও ত একটা কৃতজ্ঞতা আছে ! দাদার মুখ গল্পীর হইল। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, আপনি ষে অবাক করলেন মশাই! পুরুষ-বাচ্চ বিদেশে-বিভূয়ে এসে বয়সের দোষে নাহয় একটা শখ ক’রেই ফেলেচে। কোন মানুষটাই বা না করে বলুন ? আমার ত জানতে বাকী নেই, এর না-হয় একটু জানাজানি হ’য়েই পড়েছে—তাই বলে বুঝি চিরকালটা এমনি ক’রেই বেড়াতে হবে। ভাল হ’য়ে সংসার-ধৰ্ম্ম ক’রে পাচজনের একজন হতে হবে না ? মশাই, এ বা কি ! কাচা বয়সেকত লোক হোটেলে ঢুকে যে মুরগী পৰ্য্যন্ত থেয়ে আসে। কিন্তু বয়স পাকলে কি আর তাই করে, না, করলে চলে? আপনিই বিচার করুন না, কথাটা সত্যি বলচি, না, মিথ্যে বলচি ! বস্তুতই এ বিচার করিবার মত বুদ্ধি ভগবান আমাকে দেন নাই, সুতরাং চুপ করিয়া রহিলাম। অফিসের বেলা হইতেছিল, স্নানাহার করিয়া বাহির হইয় গেলাম। কিন্তু অফিস হইতে ফিরিলে তিনি সহসা বলিয়া উঠিলেন, ভেবে দেখলাম, আপনার পরামর্শ ভাল মশাই । এ জাতকে বিশ্বাস নেই, কি জানি, শেষে একটা ফ্যাসাদ বাধাবে না কি-ব'লে যাওয়াই ভালো। এ বেটীরা আর পারে না কি ! না আছে লজ্জাসরম, না আছে একটা ধৰ্ম্মজ্ঞান। জানোয়ার বললেই ত চলে। বলিলাম, হ্যা, সেই ভাল । কিন্তু কথাটা বিশ্বাস করিতে পারিলাম না। কেমন যেন মনে হইতে লাগিল, ভিতরে কি একটা ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্র সত্যই ছিল। কিন্তু সে যে এত নীচ, এত নিষ্ঠুর, তাহা চোখে না দেখিলে কেহ কল্পনা করিতে পারে বলিয়াও ভাবিতে পারি না । চট্টগ্রামের জাহাজ রবিবারে ছাড়ে । অফিস বন্ধ, সকালবেলাটায় করিই বা কি, তাই তাকে see ofা করিতে জাহাজঘাটে গিয়া উপস্থিত হইলাম। ($br