পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ তুললে সে হয় আর এক-ধরণের অসংযম। তার দণ্ড আছে। আত্ম-নিগ্রহের উগ্র দন্তে আধ্যাত্মিকতা ক্ষীণ হয়ে আসে। বেশ, আমি যাব আপনার আশ্রমে। হরেন্দ্র বলিল, যেতেই হবে—না গেলে আমি ছাড়ব না। কিন্তু একটা কথা বলে রাখি, আমাদের আড়ম্বর নেই—ঘটা করে আমরা কিছু করিনে। সহসা নীলিমাকে কহিল, আমার আদর্শ উনি। ওঁর মতই আমরা সহজের পথিক । বৈধব্যের কোন বাহপ্রকাশ ওঁতে নেই—বাইরে থেকে মনে হবে যেন বিলাস-ব্যসনে মগ্ন হয়ে আছেন, কিন্তু জানি ওঁর দুঃসাধ্য আচার-নিষ্ঠ, ওঁর কঠোর আত্মশাসন । কমল মৌন হুইয়া রহিল। হরেন্দ্র ভক্তি ও শ্রদ্ধায় বিগলিত হইয়া বলিতে লাগিল, আপনি ভারতের অতীত যুগের প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন নন, ভারতের আদর্শ আপনাকে মুগ্ধ করে না ; কিন্তু বলুন ত—নারীত্বের এতবড় মহিমা, এতবড় আদর্শ আর কোন দেশে আছে ? এই গৃহেই উনি গৃহিণী, সেজদার মা-মরা সস্তানের উনি জননীর ন্যায়। এ-বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব ওঁর উপরে। অথচ কোন স্বার্থ, কোন বন্ধন নেই। বলুন ত, কোন দেশের বিধবা এমন পরের কাজে আপনাকে বিলিয়ে দিতে পেরেচে ? কমলের মুখ স্মিতহাস্তে বিকশিত হইয়া উঠিল, বলিল, এর মধ্যে ভালটা কি আছে হরেনবাবু? অপরের গৃহের নিঃস্বার্থ গৃহিণী ও অপরের ছেলের নিঃস্বার্থ জননী হবার দৃষ্টাস্ত হয়ত জগতের আর কোথাও নেই। নেই বলে অদ্ভুত হতে পারে, কিন্তু ভাল হয়ে উঠবে কিসের জোরে ? শুনিয়া হরেন্দ্র স্তব্ধ হইয়া রহিল এবং নীলিমা আশ্চৰ্য্য হইয়া, দুই চক্ষু মেলিয়া নির্নিমেষে তাহার মুখের প্রতি তাকাইয়া রহিল। কমল তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, বাক্যের ছটায়, বিশেষণের চাতুৰ্য্যে লোকে একে যত গৌরবান্বিতই করে তুলুক, গৃহিণীপনার এই মিথ্যে অভিনয়ের সন্মান নেই। এ গৌরব ছাড়াই ভাল। হরেন্দ্র গভীর বেদনার সহিত কহিল, একটা সুশৃঙ্খল সংসার নষ্ট করে দিয়ে চলে যাবার উপদেশ–এ ত আপনার কাছে কেউ আশা করে না। কমল বলিল, কিন্তু সংসার ত ওঁর নিজের নয়—হলে এ উপদেশ দিতুম না। অথচ এমনি করেই কৰ্ম্মভোগের নেশায় পুরুষেরা আমাদের মাতাল করে রাখে। তাদের বাহবার কড়া মদ খেয়ে চোখে আমাদের ঘোর লাগে, ভাবি এই বুঝি নারী-জীবনের সার্থকতা। আমাদের চা-বাগানের হরিশবাবুর কথা মনে পড়ে। বোল বছরের ছোট বোনটির যখন স্বামী মীরা গেল—তাকে বাড়িতে এনে নিজের একপাল ছেলে-মেয়ে দেখিয়ে কেঁদে বললেন, লক্ষ্মী, দিদি আমার, এখন এরাই তোর ছেলে-মেয়ে। তোর ভাবনা কি বোম, এদের মাহৰ করে, এদের মায়ের মত হয়ে, > е е