পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নিষ্ফল দারিদ্র্যচর্চার নাম কি মানুষ-গড়া হরেনবাবু? এরাই বুঝি সব ব্রহ্মচারী ? এদের মানুষ করতে চান ত সাধারণ সহজ পথ দিয়ে করুন--মিথ্যে দুঃখের বোঝা মাথায় চাপিয়ে অসময়ে কুঁজে করে দেবেন না । তাহার বাক্যের কঠোরতায় হরেন্দ্র বিব্রত হইয়া উঠিল। অবিনাশ বলিলেন, কমলকে ডেকে আনা তোমার ঠিক হয়নি হরেন। কমল লজ্জ পাইল, কহিল, আমাকে সত্যিই কারে ডাকা উচিত নয়। নীলিমা কহিল, কিন্তু সে-কারও মধ্যে আমি নয় কমল । আমার ঘরের মধ্যে কখনো তোমার অনাদর হবে না। চল, আমরা ওপরে গিয়ে বসি গে। দেখি, ঠাকুরপোর আশ্রমে আরও কি কি আতসবাজী বার হয়। এই বলিয়া সে স্নিগ্ধহাস্তের আবরণ দিয়া কমলের লজ্জা ঢাকিয়া দিল । দ্বিতলে আশ্রমের বসিবার ঘরখানি দিব্য প্রশস্ত। সাবেককালের কারুকার্য্য ছাদের নীচে ও দেওয়ালের গায়ে এখনও বিদ্যমান। বসিবার জন্য একখানা বেঞ্চ ও গোটা-চারেক চৌকি আছে, কিন্তু সাধারণতঃ কেহ তাহাতে বসে না । মেঝের উপর সতরঞ্চি পাতা। আজ বিশেষ উপলক্ষে শাদা চাদর বিছাইয় প্রতিবেশী লালাজীর গৃহ হইতে কয়েকটা মোট তাকিয়া চাহিয়া আনা হইয়াছে ; মাঝখানে তাহারই বাড়ির লতাপাতা-কাটা বারে ডালের শেজ এবং তাহারই দেওয়া সবুজ রঙের ফাস্থসে ঢাকা দেওয়াল-গিরি এক কোণে জলিতেছে ; নীচের অন্ধকার ও আনন্দহীন আবহাওয়ার মধ্য হইতে এই ঘরটিতে উপস্থিত হইয়া সকলেই খুশি হইলেন। অবিনাশ একটা তাকিয়া আশ্রয় করিয়া পদদ্বয় সম্মুখে প্রসারিত করিয়া দিয়া তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, আঃ ! বাচা গেল ! হরেন্দ্র মনে মনে পুলকিত হইয়া কহিল, আমাদের আশ্রমের এ ঘরখানি কেমন সেজদা ? অবিনাশ বলিলেন, এই ত মুস্কিলে ফেললি হরেন। কমল উপস্থিত রয়েচেন, ওঁর স্বমুখে কোন-কিছুকে ভাল বলতে সাহস হয় না—হয়ত স্বতীয় প্রতিবাদের জোরে এখুনি সপ্রমাণ করে দেবেন যে, এর ছাদের নক্সা থেকে মেঝের গালচে পৰ্য্যন্ত সবই মন্দ।" এই বলিয়া তিনি তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, আমার আর কোন সম্বল না থাকৃ কমল, অন্ততঃ বয়সের পুজিটা যে জমিয়ে তুলেচি এ তুমিও মানবে। তারই জোরে তোমাকে একটা কথা আজ বলে রাখি, সত্য বাক্য অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রিয় হয় তা অস্বীকার করিনে, কিন্তু তাই বলে অপ্রিয় বাক্য ১৯২