পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হরেন্দ্র বলিল, না, আমরা নিজেরাই রাধি। অর্থাৎ আপনি আর অজিতবাবু ? হা । কিন্তু হাসচেন যে ? নিতান্ত মন্দ রাধিনে আমরা । তা জানি, এবং পরক্ষণে সত্যই গম্ভীর হইয়া বলিল, অজিতবাবু নেই, সুতরাং ফিরে গিয়ে আপনাকে নিজেই বেঁধে খেতে হবে। আমার হাতে খেতে যদি ঘৃণা বোধ না করেন ত আমার ভারি ইচ্ছে আপনাকে নিমন্ত্ৰণ করি। খাবেন আমার হাতে ? হরেন্দ্র অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, এ বড় অন্যায়। আপনি কি সত্যিই মনে করেন আঁমি ঘৃণায় অস্বীকার করতে পারি ? এই বলিয়া সে একমুহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, আপনাকে জানাতে ক্রটি করিনি যে, যারা আপনাকে বাস্তবিক শ্রদ্ধা করে আমি তাদেরই একজন। আমার আপত্তি—শুধু অসময়ে দুঃখ দিতে আপনাকে চাইনে। কমল বলিল, আমি দুঃখ বিশেষ পাবো না তা নিজেই দেখতে পাবেন। আমুন। রাধিতে বসিয়া কহিল, আমার আয়োজন সামান্ত, কিন্তু আশ্রমে আপনাদেরও যা দেখে এসেচি তাকেও প্রচুর বলা চলে না। সুতরাং এখানে খাবার কঃ যদি বা হয়, অন্তের মত অসহ হবে না এইটুকুই আমার ভরসা। 曙 হরেন্দ্র খুশি হইয়া উত্তর দিল, আমাদের খাবার ব্যবস্থা যা দেখে এসেচেন তাই বটে। সত্যিই আমরা খুব কষ্ট করে থাকি। কিন্তু থাকেন কেন ? অজিতবাবু বড়লোক, আপনার নিজের অবস্থাও অস্বচ্ছল নয়—কষ্ট পাওয়ার ত কারণ নেই। হরেন্দ্ৰ কহিল, কারণ না থাকৃ প্রয়োজন আছে। আমার বিশ্বাস এ আপনিও বোঝেন বলে নিজের সম্বন্ধে এমনি ব্যবস্থাই করে রেখেচেন। অথচ বাইরে থেকে কেউ যদি আশ্চৰ্য্য হয়ে প্রশ্ন করে বসে, তাকেই কি এর হেতু দিতে পারেন? কমল বলিল, বাইরের লোককে না পারি ভিতরের লোককে দিতে পারব। আমি সত্যিই বড় দরিদ্র, নিজেকে ভরণ-পোষণ করবার যতটুকু শক্তি আছে তাতে এর বেশি চলে না। বাবা আমাকে দিয়ে যেতে পারেননি কিছুই, কিন্তু পরের অনুগ্রহ থেকে মুক্তি পাবার এই বীজ-মন্ত্রটুকু দান করে গিয়েছিলেন। হুরেন্দ্র তাহার মুখের প্রতি নিঃশকে চাহিয়া রহিল। এই বিদেশে কমল যে কিরূপ নিরুপায় তাহা সে জানিত। শুধু অর্থের জন্যই নয়—সমাজ, সম্মান, সহানুভূতি কোন দিক দিয়াই তাহার তাকাইবার কিছু নাই। কিন্তু এ সত্যও সে স্মরণ না করিয়া পারিল না যে, এতবড় নিঃসহায়তাও এই রমণীকে লেশমাত্র দুৰ্ব্বল করিতে পারে নাই। আজও সে ভিক্ষ চাহে না—ভিক্ষা দেয়। যে শিবনাথ তাহার এতবড় দুৰ্গতির মূল তাহাকেও ՖԳe