পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন নিই সাধে ? বললাম, ছ'মাসের আগে হবে না—তাতেই রাজি। বললে ছ’মাসের পর ত হবে, তাতেই চলবে। এই দেখুন না মজুরির টাকা পৰ্য্যন্ত হাতে শুজে দিয়ে গেল। বলিয়া সে পকেট হইতে একখানা নোটের মধ্যে মোড় কয়েকটা টাকা ঠক্‌ করিয়া কমলের সম্মুখে ফেলিয়া দিল। কমল কহিল, অর্ডার এত বেশি আসতে থাকলে দেখচি আমাকে লোক রাখতে হবে। এই বলিয়া সে পুটুলিটা খুলিয়া ফেলিয়া পুরানো পাঞ্জাবি জামাটা নাড়িয়াচড়িয়া দেখিয়া কহিল, কোন বড় দোকানের বড় মিস্ত্রীর তৈরী—আমাকে দিয়ে এরকম হবে না। দামী কাপড়টা নষ্ট হয়ে যাবে, তাকে ফিরিয়ে দেবেন। হরেন্দ্র বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, আপনার চেয়ে বড় গরিগর এখানে কেউ আছে নাকি ? এখানে না থাকে কলকাতায় আছে। সেইখানেই পাঠিয়ে দিতে বলবেন। না না, সে হবে না। আপনি যা পারেন তাই করে দেবেন, তাতেই হবে। হবে না হরেনবাবু, হলে দিতাম। এই বলিয়া সে হঠাৎ হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, অজিতবাবু বড়লোক, সৌখিন মানুষ, যা-তা তৈরি করে দিলে তিনি পরতে পারবেন কেন ? কাপড়টা মিথ্যে নষ্ট করে লাভ নেই, আপনি ফিরিয়ে নিয়ে যান। * হরেন্দ্র অতিশয় আশ্চৰ্য্য হইয় প্রশ্ন করিল, কি করে জানলেন এটা অজিতবাবুর ? কমল কহিল, আমি হাত গুণতে পারি। গরদের কাপড়, অগ্রিম মূল্য অথচ ছ'মাস বিলম্ব হলে চলে—হিন্দুস্থানী লালাজিরা অত নিৰ্ব্বোধ নয় হরেনবাবু। তাকে জানাবেন–র্তার জামা তৈরি করার যোগ্যতা আমার নেই, আমি শুধু গরীবের সস্ত গায়ের কাপড়ই সেলাই করতে পারি। এ পারিনে। হরেন্দ্র বিপদে পড়িল । শেষে কহিল, এ তার ভারি ইচ্ছে। কিন্তু পাছে আপনি জানতে পারেন, পাছে আপনার মনে হয় আমরা কোনমতে আপনাকে কিছু দেবার চেষ্টা করেচি, সেই ভয়ে অনেকদিন আমি স্বীকার করিনি। তাকে বলেছিলাম অল্পমূল্যে সাধারণ একটা কোন কাপড় কিনে দিতে। কিন্তু সে রাজি হ’লে না। বললে, এ ত আমার নিত্য-ব্যবহারের মেয়ূজাই নয়, এ কমলের হাতে তৈরী জাগা, এ শুধু বিশেষ উপলক্ষে পৰ্ব্বদিনে পরবার। এ আমার তোলা থাকবে। এ-জগতে তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা বোধ করি আপনাকে কেউ করে না । কমল বলিল, কিছুকাল পূৰ্ব্বে ঠিক তার উণ্টো কথাই র্তার মুখ থেকে বোধ করি অনেকেই শুনেছিল। নয় কি ? একটু চেষ্টা করলে আপনারও হয়ত স্মরণ হবে। মনে করে দেখুন ত? >ዓ®.