পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অক্ষয় ইতিহাসের অধ্যাপক। কঠিন সাচ্চ লোক বলিয়া বন্ধু-মহলে খ্যাতি আছে । গান-বাজনা ভাল-লাগাট তাহার মতে চিত্তের দুৰ্ব্বলতা। নিষ্কলঙ্ক, সাধু ব্যক্তি। তাই শুধু নিজের নয়, পরের চারিত্রিক পবিত্রতার প্রতিও তাহার অত্যন্ত সজাগ তীক্ষু দৃষ্টি। শিবনাথের অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনে সহরের আবহাওয়া পুনশ্চ কলুষিত হইবার আশঙ্কায় তাহার গভীর শান্তি বিক্ষুব্ধ হইয়াছে। বিশেষতঃ বাটির মেয়ের আসিযাছে, পর্দার আড়াল হইতে গান শুনিয়া ও চেহারা দেখিয়া ইহাদের ভাল লাগার সম্ভাবনায় মন তাহার অতিশয় খারাপ হইয৷ উঠিল ; বলিলেন, গান শুনেছিলুম বটে মধুবাবুর। এ গান আপনাদের যত মিষ্টি লেগে থাক, এতে প্রাণ নেই। সকলেই চুপ করিয়৷ রছিলেন। কারণ, প্রথমত: অপরিজ্ঞাত মধুবাবুর গান কাহারও শোনা ছিল না এবং দ্বিতীয়তঃ গানের প্রাণ থাকা না-থাকার সুনির্দিষ্ট ধারণা অক্ষয়ের ন্যায় আর কাহারও স্পষ্ট নয়। গুণমুগ্ধ আশুবাবু উত্তেজনা-বশে তর্ক করিতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু অবিনাশ চোখের ইঙ্গিতে র্তাহাকে নিরস্ত করিলেন । সঙ্গীত সম্বন্ধেই আলোচনা চলিতে লাগিল। কবে কে কোথায় কিরূপ শুনিয়াছেন তাহার ব্যাখ্যা ও বিবরণ দিতে লাগিলেন । কথায় কথায় রাত্রি বাড়িতে লাগিল। ভিতর হইতে খবর আসিল, মেযেদের খাওযা শেষ হইয়াছে এবং তঁহাদের বাড়ি পাঠাইয় দেওয়া হইতেছে। বৃদ্ধ সদর-আলা রাত্রির অজুহাতে বিদায় লইলেন এবং অজীর্ণ রোগগ্রস্ত মুন্সেফবাবু জল ও পান মাত্র মুখে দিয়াই তাহার সঙ্গী হইলেন। , রছিলেন শুধু প্রফেসর-মহল। ক্রমশঃ তাহদেরও আহারের ডাক পড়িল। উপরের একটা খোলা বারান্দায় আসন পাতিয়া ঠাই করা হইয়াছে, আশুবাবু নিজেও সঙ্গে বসিয়া গেলেন। মনোরম মেযেদের দিক হইতে ছুটি পাইয়া তত্ত্বাবধানের জন্য আসিয়া হাজির হইল। £ শিবনাথের ক্ষুধা যতই থাক আহারে রুচি ছিল না, সে না থাইয়াই বাসায় ফিরিতে উষ্ঠত হইয়াছিল, কিন্তু মনোরম কোনমতেই তাহাকে ছাড়িয়া দিল না, পীড়াপীড়ি করিয়া সকলের সঙ্গে বসাইয়া দিল। আয়োজন বড়লোকের মতই হইয়াছিল। টুন্‌ড়া হইতে আসিবার পথে ট্রেনে কি করিয়া শিবনাথের সহিত আশুবাবুর পরিচয় ঘটিয়াছিল এবং মাত্র দুই-তিনদিনের আলাপেই কি করিয়া সে পরিচয় ঘনিষ্ঠ আীয়তায় পরিণত হইয়াছে, ইহাই সবিস্তারে বর্ণনা করিয়া তিনি নিজের কৃতিত্ব সপ্রমাণ করিতে কহিলেন, আর সবচেয়ে বাঙ্গদুরি হচ্ছে আমার কানের। ওঁর গলার অন্মুট সামান্ত একটু গুঞ্জন-ধ্বনি থেকেই আমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিলাম উনি গুণী, উনি অসাধারণ ব্যক্তি। এই বলিয়া কন্যাকে সাক্ষ্যরূপে আহবান করিয়া কহিলেন, > o