শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ থাকার মধ্যে আছে শুধু টাকা, বাবার দেওয়া । এ-ছাড়া এমন কিছুই নিজের নেই যে আমারও অজ্ঞাতসারে ভূমি আমাকেই ভালবাসতে পার। কমল কহিল, টাকার জন্য ভাবনা নেই, আশ্রমবাসীরা একবার যখন সন্ধান পেয়েচে তখন সে ব্যবস্থা তারাই করবে, এই বলিয়া সে হাসিয়া কহিল, কিন্তু অন্ত সকল দিকেই যে আপনি এমন নিঃস্ব এ-খবর কি ছাই আগে পেয়েচি ! তা হলে কি কখনো ভালবাসতে যেভুম ? তা ছাড়া আপনার স্বভাবের ভাল-মন্টুকু বুঝে দেখবার সময় পেলুম কই ? মনের মধ্যে ছিল শুধু একটা সন্দেহ, তার ঠিকান পেতুম মা, কেবল এই ত মিনিট-দশেক হ’লো একলা ঘরে বিছানার স্বমুখে দাড়িয়ে, অকস্মাৎ ঠিক খবরটি কে এসে আমার কানে কানে দিয়ে গেল । অজিত গভীর বিস্ময়ে প্রশ্ন করিল, সত্যি বলচ মাত্র মিনিট-দশেক ? কিন্তু সত্যি হলে এতো পাগলামি । কমল বলিল, পাগলামিই ত ! তাই ত আপনাকে বলেছিলুম আমাকে আর কোথাও নিয়ে চলুন। বিবাহ করে ঘর-সংসার করুন এ-ভিক্ষে ত চাইনি ? অজিত অত্যন্ত কুষ্ঠিত হইল, কহিল, ভিক্ষে বলচ কেন কমল, এ ভিক্ষে চাওয়া ময়, এ তোমার ভালবাসার অধিকার। কিন্তু অধিকারের দাবি তুমি করলে না, চাইলে শুধু তাই যা বুদবুদের মত স্বল্পায়ু এবং তারই মত মিথ্যে। কমল কহিল, হতেও ত পারে এর পরমায়ু কম, কিন্তু তাই বলে মিথ্যে হবে ন্সে? আয়ুর দীর্ঘতাকেই যারা সত্য বলে অঁাকড়ে ধরতে চায় আমি তাদের কেউ নয় । কিন্তু এ আনন্দের যে কোন স্থায়িত্ব নেই কমল । না-ই থাক্ । কিন্তু গাছের ফুল শুকাবে বলে সুদীর্ঘস্থায়ী শোলার ফুলের তোড়া বেঁধে যার ফুল-দানিতে সাজিয়ে রাখে, তাদের সঙ্গে আমার মত মেলে না । আপনাকে আরও একবার ঠিক এই কথাই বলেছিলুম যে, কোন আনন্দেরই স্থায়িত্ব নেই। আছে শুধু তার ক্ষণস্থায়ী দিনগুলি। সেই ত মানব-জীবনের চরম সঞ্চয়। তাকে বাধতে গেলেই সে মরে। তাই ত বিবাহের স্থায়িত্ব আছে, নেই তার আনন্দ । দুঃসহ স্থায়িত্বের মোট দড়ি গলায় সে আত্মহত্যা করে মরে । অজিতের মনে পড়িল ঠিক এই কথাই সে ইহার কাছে পূৰ্ব্বে শুনিয়াছে। শুধু মুখের কথা নয়, ইহাই তাহার অন্তরের বিশ্বাস । শিবনাথ তাহাকে বিৰাহ করেন নাই, ফাকি দিয়াছে, কিন্তু এ লইয়া কমল একটাদিনের জন্তও অভিযোগ করে নাই । কেন করে নাই ? আজ এই প্রথমদিনের জষ্ঠ অজিত নিঃসংশয়ে বুঝিল এই ফকির ఏన8