পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( তেমনি নীরব। শিরায় সঞ্চারিত রক্তধারার স্থায় এই নিঃশব্দ প্রবাহ একাকী আগুবাৰু ভিন্ন আর বোধ করি কেহ অনুভবও করে না । হিম-খজুর প্রথমার্ধ প্রায় গত হইতে চলিল, কিন্তু যে-কারণেই হোক, এ বৎসর শীত এখনো তেমন কড়া করিয়া পড়ে নাই। আজ কিন্তু সকাল হইতেই টিপ টপ বৃষ্টি নামিয়াছিল—বিকেলের দিকে সেটা চাপিয়া আসিল। বাহিরের কেহ যে আসিতে পারিবে এমন সম্ভাবনা রহিল না। ঘরের শার্শিগুলা অসময়েই বন্ধ হইয়াছে, আপ্তবাবু আরাম-কেদারায় তেমনি পা ছড়াইয়া একটা শাল চাপা দিয়া কি একখান বই পড়িতেছেন, বেলা হয়ত কতকটা বিরক্তির জন্যই বলিয়া বসিল, এ পোড়াদেশের সবই উণ্টো। কিছুকাল আগে এ-অঞ্চলে একবার এসেছিলুম—জুন কিংবা জুলাই হয়ত হবে—এই জলের জন্য যে দেশ জুড়ে এতবড় হাহাকার ওঠে, না এলে এ কখনো আমি ভাবতেও পারতুম না। তাই ভাবি, এ কঠিন দেশে লোকে তাজমহল গড়তে গিয়েছিল কোন বিবেচনায় ? 臺門 নীলিমা অদূরে একটা চেকিতে বসিয়াই সেলাই করিতেছিল, মুখ না তুলিয়াই কহিল, এর কারণ কি সকলে টের পায় ? পায় না। বেলা সরল-চিত্তে প্রশ্ন করিল, কেন ? নীলিমা বলিল, সমস্ত বড় জিনিসই যে মাচুষের হাহাকারের মধ্যেই জন্মলাভ করে, পৃথিবীর আমোদ-আহ্লাদেই যার মগ্ন এ তাদের চোখে পড়বে কোথা থেকে 1 · জবাবটা এমনি অভাবিতরূপে কঠোর যে শুধু বেলা নিজে নয়, আগুবার পর্য্যন্ত বিস্ময়াপন্ন হইলেন। " বই হইতে মুখ সরাইয়া দেখিলেন, সে তেমনি একমনে সেলাই করিয়া যাইতেছে, যেন এ-কথা তাহার মুখ দিয়া একেবারেই বাহির হয় নাই । বেলা কলহপ্রিয় রমণী নয় এবং মোটের উপর সে সুশিক্ষিতা । দেখিয়াছে শুনিয়াছে অনেক এবং বয়সও বোধ করি পয়ত্ৰিশের উপরের দিকেই গেছে, কিন্তু সযত্ন সতর্কতায় যৌবনের লাবণ্য আজও পশ্চিমে হেলে নাই—অকস্মাৎ মনে হয় বুঝি বা তেমনিই আছে। রঙ উজ্জল, মুখের একটি বিশিষ্ট রূপ আছে, কিন্তু একটু লক্ষ্য করিলেই দেখা যায় স্নিগ্ধ কোমলতার অভাবে তাহাকে যেন রুক্ষ করিয়া রাখিয়াছে। চোখের দৃষ্টি হাস্ত-ৰৌতুকে চপল, চঞ্চল—নিরন্তর ভাসিয়া বেড়ানোই যেন তাহার কাজ—কোথাও কোন-কিছুতে স্থির হইবার মত তাহাতে ভারও নাই, গভীর তলদেশে কোন মূলও নাই। জানন্দ-উৎসবেই তাহাকে মানায় ; দুঃখের মাঝখানে হঠাৎ আলিয়া পড়িলে গৃহস্বামীকে লজ্জায় পড়িতে হয়। io ●》