পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আত্মার একান্ত মিলনের ব্যাকুলত নয়—এ-সব অন্ত কথা। বড় কথা। কিন্তু যা বড় নয়—যা রূপজ, যা অশুভ, যা অসুন্দর, যা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী—সেই কুৎসিতের জন্তও যে নারীর অভিজাত চিত্ত-তলে এতবড় আসন পাতা ছিল, পুরুষের বিমুখত যে তাকে এমন নিৰ্ম্মম অপমানে আহত করতে পারে আজকের পূৰ্ব্বে সে তার কি জানত ? হরেক্স কহিল, অজিত বেশ ত বলেন। গল্পটা খুব মন দিয়ে পড়েচেন । মেয়ের চুপ করিয়া শুধু চাহিয়া রহিল, কোন মন্তব্যই প্রকাশ করিল না। আপ্তবাবু বলিলেন, হঁ। তার পরে অজিত ? অজিত বলিতে লাগিল, মহিলাটির অকস্মাৎ মনে পড়ে গেল যে, কেবল ঐ মাচুষটিই ত নয়, বহু লোক বহুদিন ধরে তাকে ভালবেসেচে, প্রার্থনা করেচে, সেদিন তার একটুখানি হাসিমুখের একটিমাত্র কথার জন্য তাদের আকুলতার শেষ ছিল না। প্রতিদিনের প্রতি পদক্ষেপেই যে তারা কোন মাটি ফুড়ে এসে দেখা দিতো, তার হিসেব মিলতো না। তারাই আজ গেল কোথায় ? কোথাও ত যায়নি, এখনো ত মাঝে মাঝে তার চোখে পড়ে। তবে গেছে কি তার নিজের কণ্ঠের সুর বিগড়ে ? তার হাসির রূপ বদলে ? এই ত সেদিন, দশ-পনেরো বছর, কতদিনই বা, এরই মাঝখানে কি তার সব হারালো ? আপ্তবাবু সহসা বলিয়া উঠিলেন, যায়নি কিছুই অজিত, হয়ত শুধু গেছে তার যৌবন—তার মা হবার শক্তিটুকু হারিয়ে। অজিত র্তাহার প্রতি চাহিয়া বলিল, ঠিক কথা । গল্পটা আপনি পড়েছিলেন ? न । মইলে ঠিক এই কথাটিই জানলেন কি করে ? আগুবাবু প্রত্যুত্তরে শুধু একটুখানি হাসিলেন, কছিলেন, তুমি তার পরে বল। অজিত বলিতে লাগিল, তিনি বাড়ি ফিরে শেবার ঘরের বড় আরণীর স্বমুখে আলো জেলে দাড়ালেন । বাইরে যাবার পোষাক ছেড়ে রাত্রিবাসের কাপড় পরতে পরতে নিজের ছায়ার পানে চেয়ে আজ এই প্রথম চোখের দৃষ্টি যেন একেবারে বদলে গেল। এমন করে ধাক্কা না খেলে হয়ত এখনো চোখে পড়তে না যে, নারীর যা সবচেয়ে বড় সম্পদ—আপনি যাকে বলছিলেন তার মা হবার শক্তি—সে শক্তি আজ নিস্তেজ, মান ; সে আজ সুনিশ্চিত মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়ে দাড়িয়েচে ; এ-জীবনে আর তাকে ফিরিয়ে আনা যাবেন । তার নিশ্চেতন দেহের উপর দিয়ে অবিচ্ছিন্ন জলধারার ক্ষায় সে-সম্পদ প্রতিদিন ব্যর্থতায় ক্ষয় হয়ে গেছে ; কিন্তু এতবড় ঐশ্বৰ্য্য যে এমন স্বল্পায়ু, এ-বাৰ্ত্তা পৌঁছিল তার কাছে আজ শেষ বেলায় ! &X8