শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ । শুনে মনে হ’লো সবাই যেন ওর চেয়ে ছোট হয়ে গেছে, অথচ মেয়েদের কত কথাই ত ভাবতে হয় । আপ্তবাবু বলিলেন, ভাবাই ত উচিত নীলিমা ? Č বেলা কহিল, ইচ্ছে করলে ও-রকম বে-পরোয় স্বাধীন হয়ে উঠতে তো আমরাও পারি। নীলিমা বলিল, না পারিনে। ইচ্ছে করলে আমিও পারিনে, আপনিও না ; কারণ জগৎ-সংসার যে-কালি গায়ে ঢেলে দেবে, সে তুলে ফেলবার শক্তি আমাদের নেই। একটুখানি থামিয়া কহিল, ও-ইচ্ছে একদিন আমারও হয়েছিল, তাই অনেকদিন থেকেই এ-কথা ভেবে দেখেচি। পুরুষের তৈরী সমাজের অবিচারে জলে জলে মরেচি —কত যে জলেচি সে জানাবার নয়। শুধু জলুনিই সার হয়েচে– কিন্তু কমলকে দেখবার আগে এর আসল রূপটি কখনো চোখে পড়েনি। মেয়েদের মুক্তি, মেয়েদের স্বাধীনতা তো আজকাল নরনারীর মুখে মুখে, কিন্তু ঐ মুখের বেশি আর এক-পা এগোয় না । কেন জানেন ? এখন দেখতে পেয়েচি স্বাধীনতা তত্ব-বিচারে মেলে না, স্থায়-ধর্শ্বের দোহাই পেড়ে মেলে না, সভায় দাড়িয়ে দল বেঁধে পুরুষের সঙ্গে কোদল করে মেলে না—এ কেউ কাউকে দিতে পারে না—দেনা-পাওনার বস্তুই এ নয় ;. কমলকে দেখলেই দেখা যায় এ নিজের পূর্ণতায়, আত্মার আপন বিস্তারে আপনি আসে। বাইরে থেকে ডিমের খোলা ঠুকরে ভিতরের জীবকে মুক্তি দিলে সে মুক্তি পায় না—মরে। আমাদের সঙ্গে তার তফাৎ ঐখানে । বেলাকে কহিল, এই যে দশ-বারোদিন কোথায় চলে গেল, সকলের ভয়ের সীমা রইল না, কিন্তু এ আশঙ্কা কারও স্বপ্নেও উদয় হ’লে না যে, এমন কিছু কাজ কমল করতে পারে যাতে তার মর্য্যাদা হানি হয়। বলুন তো, মানুষের মনে এতখানি বিশ্বাসের জোর আমরা হলে পেতাম কোথায় ? এ গৌরব আমাদের দিত কে ? পুরুষেও না, মেয়েরাও না। ہتے= আগুবাবু সবিস্ময়ে তাহার মুখের প্রতি ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, বাস্তবিকই সত্য নীলিমা । বেলা প্রশ্ন করিল, কিন্তু তার স্বামী থাকলে সে কি করত ? * নীলিমা বলিল, তার সেবা করতো, রাধতো-বাড়তো, ঘর-দের পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতো, ছেলে হলে তাদের মানুষ করতো ; বস্তুতঃ একলা-মানুষ, টাকাকড়ি কম, আমার বোধ হয় সময়ের অভাবে তখন আমাদের সঙ্গে হয়ত একবার দেখা করতেও পারতো না । 疊 २२७