শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জন্তে স্থির হয়ে আছে। আমাকে খুজছিলেন কেন ? এর কোনটাই তো আমি ঠেকাতে পারিনে । o নীলিমা কহিল, অথচ ঠেকাবার কল্পনা নিয়েই বোধ করি উনি তোমুকে খুজিছিলেন। কিন্তু আমি তোমাকে খুজিনি ভাই, কায়মনে ভগবানকে ডাকছিলাম যেন দেখা পেয়ে তোমার প্রসন্ন দৃষ্টি লাভ করতে পারি। বাঙলাদেশে মেয়ে হয়ে জন্মে অদৃষ্টকে দোষ দিতে গেলে থেই খুজে পাবো না ; কিন্তু বুদ্ধির দোষে বীপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি দুটোই তো খুইয়েচি, এর ওপর উপরি-লোকসান যা ভাগ্যে ঘটেচে সে বিবরণ দিতে পারবে না—এখন ভগ্নীপতির আশ্রয়টাও ঘুচল। আণ্ডবাবুকে ইঙ্গিতে দেখাইয়া বলিল, দয়া-দক্ষিণ্যের সীমা নেই, যে-কটা দিন এখানে আছেন মাথা গোজবার স্থান পাবো, কিন্তু তার পরে অন্ধকার ছাড়া চোখের সামনে আর কিছুই দেখতে পাইনে। ভেবেচি, এবার তোমাকে ঠাই দিতে বলর, না পাই মরব। পুরুষের কৃপা ভিক্ষে চেয়ে স্রোতের আবর্জনার মত আর ঘাটে ঠেকতে ঠেকতে আয়ুর শেষ দিনটা পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবো না । বলিতে বলিতে তাহার গলার স্বরটা ভারি হইয়া আসিল, কিন্তু চোখের জল জোর করিয়া দমন করিয়া রাখিল । কমল তাহার মুখের পানে চাহিয়া শুধু একটু হাসিল। হাসলে যে ? হাসাটা জবাব দেওয়ার চেয়ে সহজ বলে। নীলিমা বলিল, সে জানি। কিন্তু আজকাল মাঝে মাঝে কোথায় যে অদৃপ্ত হয়ে যাও, সেই তো আমার ভয় । কমল কহিল, হলুম বা অদৃশ্য। কিন্তু দরকার হলে আমাকে খুজতে যেতে হবে না দিদি, আমি পৃথিবীময় আপনাকে খুজে বেড়াতে বার হবে । এ-সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হোন। আপ্তবাবু কহিলেন, এবার এমনি করে আমাকেও অভয় দাও কমল, আমিও যেন ওঁর মতই নিঃসংশয় হতে পারি। আদেশ করুন আমি কি করতে পারি ? তোমাকে কিছুই করতে হবে না কমল, যা করবার আমি নিজেই করব। আমাকে শুধু এইটুকু উপদেশ দাও, পিতার কৰ্ত্তব্যে অপরাধ না করি। এ-বিবাহে কেবল যে মত দিতে পারিনে তাই নয়, ঘটতে দিতেও পারিনে। কমল বলিল, মত আপনার, না দিতেও পারেন। কিন্তু বিবাহ ঘটতে দেবেন না কি করে ? ২৩e