পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( & সতীশ সবেগে মাথা নাড়িয়া কহিল, না, না, না। যাদের আস্থা নেই, শ্রদ্ধা নেই, বিশ্বাসের ভিত্তি যাদের বালির ওপর, তাদের কাছে এমনি করে বলতে থাকলেই হবে সৰ্ব্বনাশ। এই বলিয়া হরেন্দ্রর প্রতি কটাক্ষে চাহিয়া কহিল, ঠিক এইভাবেই একদিন বাঙলায়—সে বেশিদিন নয়, বিদেশের বিজ্ঞান, বিদেশের দর্শন, বিদেশের সভ্যতাকে মন্ত মনে করে সত্য-ভ্রষ্ট আদর্শ-ভ্রষ্ট জনকয়েক অসম্পূর্ণ শিক্ষায় বিজাতীয় স্পৰ্দ্ধায় স্বদেশের যা-কিছু আপন তাকে তুচ্ছ করে দিয়ে দেশের মনকে বিক্ষিপ্ত কদাচারী করে তুলেছিল। কিন্তু এতবড় অকল্যাণ বিধাতার সইল না। প্রতিক্রিয়ায় বিবেক ফিরে এলো। ভুল ধরা পড়ল। সেই বিষম দুর্দিনে মনস্বী যার স্বজাতির কেন্দ্রবিমুখ উদভ্ৰান্ত চিত্তকে স্ব-গৃহের পানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এলেন তারা দেশের নয়, সমস্ত ভারতের নমস্ত । এই বলিয়া সে দুই হাত জোড় করিয়া মাথায় ঠেকাইল । কথাটা যে সত্য তাহা সবাই জানে। সুতরাং হরেন্দ্র অজিত উভয়েই তাহাকে অমুসরণ করিয়া নমস্তদের উদ্দেশে যখন নমস্কার জানাইল তাহাতে বিস্ময়ের কিছুই ছিল না। অজিত মৃদুকণ্ঠে বলিল, নইলে খুব বেশি লোকে হয়ত সে-সময় ক্রীশ্চন হয়ে যেতো। শুধু তাদের জন্তই সেটা হতে পারেনি, কথাটা বলিয়াই সে কমলের মুখের পানে চাহিয়া দেখিল চোখে তাহার অনুমোদন নাই, আছে শুধু তিরস্কার। অথচ চুপ করিয়াই আছে। হয়ত জবাব দিবার ইচ্ছাও ছিল না । অজিতকে সে চিনিত, কিন্তু হরেন্দ্র যখন ইহার অফুট প্রতিধ্বনি করিল তখন তাহার অনতিকালপূর্বের কথাগুলার সহিত এই সসঙ্কোচ জড়িমা এমনি বিসদৃশ শুনাইল যে সে নীরবে থাকিতে পারিল না। কহিল, হরেনবাবু, এক-ধরণের লোক আছে তারা ভূত মানে না কিন্তু ভূতের ভয় করে। আপনি তাই। এবং একেই বলে ভাবের ঘরে চুরি। এমন অন্তায় আর কিছু হতেই পারে না । এদেশে আশ্রমের জন্ত কখনো টাকার অভাব হবে না এবং ছেলের দুর্ভিক্ষও ঘটবে না, অতএব আপনি ছাড়াও সতীশবাবুর চলে যাবে, কিন্তু ওকে পরিত্যাগ করার মিথ্যাচার আপনাকে চিরদিন দুঃখ দেবে। একটু থামিয়া বলিল, আমার বাবা ছিলেন ক্রীশ্চান, কিন্তু আমি যে কি সে গোজ তিনিও করেননি, আমিও করিনি- তার প্রয়োজন ছিল না, আমার মনে ছিল না । কামনা করি ধৰ্ম্মকে যেন আমরণ এমনি ভুলেই থাকতে পারি, কিন্তু উচ্ছম্বল অনাচারী বলে এইমাত্র যাদের গঞ্জনা দিলেন এবং নমস্ত বলে যাদের নমস্কার করলেন, স্বদেশের সৰ্ব্বনাশের পাল্লায় কার দান ভারি, এ-প্রশ্নের জবাব একদিন লোকে চাইতে ভুলবে না। সতীশের গায়ে যেন কে চাবুকের ঘা মারিল। তীব্র বেদনায় অকস্মাৎ উঠিয়া দাড়াইয়৷ জিজ্ঞাসা করিল, আপনি জানেন এদের নাম ? কখন গুনেচেন করে কাছে ? ←8Ꮍ