পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন আশুবাবু বলিলেন, কমল, তুমি ওর আদর্শ, কিন্তু চাদের আলো যেন স্বৰ্য্যকিরণকে ছাপিয়ে গেল। তোমার কাছে ও যা পেয়েচে, অন্তরের রসে ভিজিয়ে মিঞ্চ-মাধুর্য্যে কতদিকেই না ছড়িয়ে দিলে। এই দুটাে দিনে আমি দুশো বচ্ছরের ভাবনা ভেবেচি কমল । স্ত্রীর ভালবাসা আমি পেয়েছিলাম, তার স্বাদ চিলি, স্বরূপ জানি ; কিন্তু নারীর ভালবাসার সে কেবল একটিমাত্র দিক, এই নতুন তত্ত্বটি আমাকে যেন হঠাৎ আচ্ছন্ন কুরচে। এর কত বাধা, কত ব্যথা, আপনাকে বিসর্জন দেবার কতই না অজানা আয়োজন। হাত পেতে নিতে পারলাম না বটে, কি বলে যে একে আজ নমস্কার জানাবো অামি ভেবেই পাইনে মা । কমল বুঝিল, পত্নী-প্রেমের সুদীর্ঘ ছায়া এতদিন যে সকল দিকে আঁধার করিয়াছিল তাহাই আজ ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হইয়া আসিতেছে। আপ্তবাবু বলিলেন, ভাল কথা। মণিকে আমি ক্ষমা করেচি। বাপের অভিমানকে আর তাকে চোখ রাঙাতে দেব না। জানি সে দুঃখ পাবেই, জগতের বিধিবদ্ধ শাসন তাকে অব্যাহতি দেবে না। অনুমতি দিতে পারব না, কিন্তু যাবার সময় এই আশীৰ্ব্বাদটুকু রেখে যাবো, দুঃখের মধ্যে দিয়ে সে আপনাকে একদিন যেন আবার খুজে পায়। তার ভুল-ভ্রান্তি-ভালবাসা—ভগবান তাদের যেন সুবিচার করেন। বলিতে বলিতে র্তাহার কণ্ঠস্বর ভারি হইয়া আসিল । এমনিভাবে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে কাটিল । তাহার মোটা হাতটির উপর “কমল ধীরে ধীরে হাত বুলাইতেছিল, অনেকক্ষণ পরে মৃদু-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, কাকাবাবু, নীলিমাদিদির সম্বন্ধে কি স্থির করলেন ? আপ্তবাবু অকস্মাৎ সোজা হইয়া উঠিয়া বসিলেন, কিলে যেন তাহাকে ঠেলিয়া তুলিয়া দিল ; বলিলেন, দেখ মা, তোমাকে আগেও বোঝাতে পারিনি, এখনো পারব না । হয়ত আজ আর সামর্থ্যও নেই। কিন্তু কখনো এ-সংশয় আসেনি যে, একনিষ্ঠ প্রেমের আদর্শ মানুষের সত্য আদর্শ নয়। নীলিমার ভালবাসাকে সন্দেহ করিনি, কিন্তু সেও যেমন সত্যি, তাকে প্রত্যাখ্যান করাও আমার তেমনি সত্যি। কোনমতেই একে নিফল আত্মবঞ্চনা বলতে পারব না। এ তর্কে মিলবে না, কিন্তু এই নিফলতার মধ্যে দিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। কোথায় যাবে জানিনে, কিন্তু বাবেই । সে আমার কল্পনার অতীত, কিন্তু এতবড় ব্যথার দান মামুষে একদিন পাবেই পাবে। নইলে জগৎ মিথ্যে, সৃষ্টি মিথ্যে । তিনি ধলিতে লাগিলেন, এই যে নীলিমা-কোন মানুষেরই ধে জমূল্য । সম্পদ—কোথাও তার আজ দাড়াবার স্থান নেই। তার ব্যর্থতা আমার বাৰি ૨૯:૧