পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একটুখানি থামিয়া বলিল, কিন্তু আমার অন্ত নালিশ আছে। সেদিন অক্ষয়বাবু প্রভৃতি অধ্যাপকের দল আমার বিরুদ্ধে ইঙ্গিত করেছিলেন, আমি যেন একটা মতলব নিয়ে এ-বাড়িতে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠবার চেষ্টা করেচি। সকল মামুষের স্থায়-অন্যায়ের ধারণা এক নয়—এও একটা কথা, এবং বাইরে থেকে কোন একটা ঘটনা যা চোখে পড়ে, সেও তার সবটুকু নয়—এও আর একটা কথা। কিন্তু যাই হোক, আপনাদের মধ্যে প্রবেশ করার কোন গুঢ় অভিসন্ধি সেদিনও আমার ছিল না, আজও নেই। সহসা আশুবাবুকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, আমার গান শুনতে আপনি ভালবাসেন, বাস ত আমার বেশি দূরে নয়, যদি কোনদিন সে খেয়াল হয় পায়ের ধূলো দেবেন, আমি খুশিই হব। এই বলিযা পুনরায় নমস্কার করিয়া শিবনাথ বাহির হইয়া গেল। পিতা বা কন্যা উভয়ের কেহই একটা কথারও জবাব দিতে পারিলেন না। আশুবাবুর বুকের মধ্যে অনেক কথাই একসঙ্গে ঠেলিয়৷ আসিল, কিন্তু প্রকাশ পাইল না। বাহিরে বৃষ্টি তখন চাপিয পড়িতেছিল ; এমন কথাও তিনি উচ্চারণ করিতে পারিলেন না, শিবনাথবাবু, ক্ষণকাল অপেক্ষ করিয়া যান । ভূত্য চায়ের সরঞ্জাম আনিয়া উপস্থিত করিল। মনোরম জিজ্ঞাসা করিল, তোমার চা কি এখানেই তৈরি করে দেব বাবা ? আগুবাবু বলিলেন, না, আমার জন্য নয়, শিবনাথ একটুখানি চা খাবেন বলেছিলেন। মনোরমা ভূত্যকে চা ফিরাইয়া লইয়া যাইবার ইঙ্গিত করিল। মনের চঞ্চল্যবশতঃ আশুবাবু কোমরের ব্যথা সত্বেও চৌকি হইতে উঠিয়া ঘরের মধ্যে পায়চারি করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, হঠাৎ জানালার কাছে থামিয়া দাড়াইয়া ক্ষণকাল ঠাহর করিয়া দেখিয়া কহিলেন, ঐ গাছতলাটায় দাড়িয়ে শিবনাথ না ? যেতে পারেনি, ভিজচে । পরক্ষণেই বলিয়া উঠিলেন, সঙ্গে কে একটি স্ত্রীলোক দাড়িয়ে । বাঙালী মেয়েদের মত কাপড়-পরা—ও-বেচারা বোধ হয় যেন আরও ভিজেচে । এই বলিয়া তিনি বেহারাকে ডাক দিয়া বলিলেন, যদু, দেখে আয় ত রে, গেটের কাছে গাছতলায় দাড়িয়ে ভিজচে কে ? যে-বাবুটি এইমাত্র গেলেন তিনিই কি না ? কিন্তু দাড়া—দাড়া— } কথা তাহার মাঝখানেই থামিয়া গেল, অকস্মাৎ মনের মধ্যে ভয়ানক সন্দেহ জন্মিল, মেয়েটি শিবনাথের স্ত্রী নহে ত ? \bo