পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ আজই ? এই ভোরে ? ই । আমাদের সমস্ত প্রস্তুত। ঐখান থেকে আমাদের যাত্রা হবে স্বরু। ব্যাপারটা অজানা নয়, তথাপি সকলেই যেন লজ্জায় স্নান হইয়া উঠিল। নিঃশব্দ পদক্ষেপে নীলিমা আসিয়া ঘরের একপাশে বসিল । সঙ্কোচ কাটাইয়া আপ্তবাবু মুখ তুলিয়া চাহিলেন। কথাটা তার গলায় একবার বাধিল, তার পরে ধীরে ধীরে বলিলেন, হয়ত আর কখনো আমাদের দেখা হবে না, তোমরা উভয়েই আমার স্নেহের বস্তু, যদি তোমাদের বিবাহ হ’তে দেখে যেতে পেতাম । অজিত সহসা যেন কুল দেখিতে পাইল, ব্যগ্র-কণ্ঠে কহিয়া উঠিল, এ-জিনিস আমি চাইনি আণ্ডবাবু, এ আমার ভাবনার অতীত। বিবাহের কথা বার বার বলেচি, বার বার মাথা নেড়ে কমল অস্বীকার করেচে। নিজের যাবতীয় সম্পদ, যা-কিছু আমার আছে, সমস্ত লিখে দিয়ে নিজেকে শক্ত করে ধরা দিতে গেছি, কমল কিছুতে সন্মত হয়নি। আজ এদের স্বমুখে তোমাকে আবার মিনতি করি কমল, তুমি রাজি হও । আমার সর্বস্ব তোমাকে দিয়ে ফেলে বাচি । ফকির কলঙ্ক থেকে নিস্কৃতি পাই । নীলিমা অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। অজিত স্বভাবতঃ লাজুক প্রকৃতির, সৰ্ব্বসমক্ষে তাহার এই অপরিমেয় ব্যাকুলতায় সকলের বিস্ময়ের সীমা রহিল না। আজ সে আপনাকে নিঃস্ব করিয়া দিতে চায়। নিজের বলিয়া হাতে রাখিবার আজ তাহার আর এতটুকু প্রয়োজন নাই। কমল তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া কহিল, কেন, তোমার এত ভয় কিসের ? ভয় আজ না থাকে, কিন্তু— কিন্তুর দিন আগে তো আস্বক। এলে যে তুমি কিছুই নেবে না জানি। কমল হাসিয়া বলিল, জানো ? তা হলে সেইটেই হবে তোমার সবচেয়ে শক্ত বাধন । একটু খামিয়া বলিল, তোমার মনে নেই একদিন বলেছিলাম, ভয়ানক মজবুত করার লোভে অমন নিরেট নিচ্ছিত্র করে বাড়ি গাথতে চেয়ে না । ওতে মড়ার কবর তৈরি হবে, জ্যান্ত মানুষের শোবার ঘর হবে না ।

  • অজিত বলিল, বলেছিলে জানি। জানি আমাকে বাধতে চাও না, কিন্তু আমি যে

চাই । তোমাকেই বা কি দিয়ে আমি বেঁধে রাখবো কমল ? কই সে জোর ? কমল বলিল, জোরে কাজ নেই। বরঞ্চ তোমার দুৰ্ব্বলতা দিয়েই আমাকে বেঁধে রেখে । তোমার মত মানুষকে সংসারে ভালিয়ে দিয়ে যাবে অত নিষ্ঠুর &ፃ8