পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী সে বললে, এর পর যদি একজন আপনি বলে ডাকে, সে আর একজনের মরামুখ দেখবে। • কেন দিব্যি দিলেন ? আমি ত কিছুতেই তুমি বলব না। বেশ, তা হলে মরা-মুখ দেখো । দিব্যি কিছুই না। আমি মানিনে। কেমন মান না, একবার আপনি বলে প্রমাণ করে দাও । মনে মনে রাগ করে বললুম, পোড়ামুখী ! মিছে তেজ তোর রইল কোথায় ? মুখ দিয়ে ত কিছুতে বার করতে পারলিনে। কিন্তু দুৰ্গতির যদি ঐখানেই সেদিন শেষ হয়ে যেত । ক্রমে আকাশের জল থামল বটে, কিন্তু পৃথিবীর জলে সমস্ত দুনিয়াটা যেন ঘুলিয়ে একাকার করে দিলে। সন্ধ্যা হয় হয় । ফুল কটি আঁচলে বাধা, কাদা-ভর বাগানের পথে বেরিয়ে পড়লুম। নরেন বললে, চল, তোমাকে পৌছে দি । আমি বললুম, না। মন যেন বলে দিলে, সেটা ভাল নয়। কিন্তু অদৃষ্টকে ডিঙিয়ে যাব কি করে ? বাগানের ধারে এসে ভয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেলুম। সমস্ত নালাটা জলে পরিপূর্ণ। পার হই কি করে ? নরেন সঙ্গে আসেনি, কিন্তু সেইখানে দাড়িয়ে দেখছিল। আমাকে চুপ করে দাড়াতে দেখে অবস্থাটা বুঝে নিতে তার দেরী হ’ল না। কাছে এসে বললে, এখন উপায় ? আমি কীদ কঁাদ হয়ে বললুম, নালায় ডুবে মরি, সেও আমার ভাল, কিন্তু একলা অতদুর সদর রাস্ত ঘুরে আমি কিছুতে যাব না। মা দেখলে— কথাটা আমি শেষ করতেই পারলুম না । নরেন হেসে বললে, তার আর কি, চল তোমাকে সেই পিটুলি গাছটার উপর দিয়ে পার করে দিই। তাই ত বটে ! আহলাদে মনে মনে নেচে উঠলুম। এতক্ষণ আমার মনে পড়েনি যে খানিকটা দূরে একটা পিটুলি গাছ বহুকাল থেকে ঝড়ে উপড়ে নালার ওপর ত্রিজের মত পড়ে আছে। ছেলেবেলায় আমি নিজেই তার উপর দিয়ে এপার-ওপার হয়েচি । খুশি হয়ে বললুম, তাই চল— নরেন তার চেয়েও খুশি হয়ে বললে, কেমন মিষ্টি শোনাল বল ত । ՀԵԳ