পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ স্পষ্ট হ’বামাত্রই লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে গেল, কোন উত্তর মুখে এল না। সে পুনরায় বললে, তাই আমিও বিদায় নিতে এসেচি, বোধ হয় জন্মের মতই কিন্তু তার আগে দুটো কথা বলতে চাই—শুনবে ? Q বলতে বলতেই তার গলাটা যেন ধরে গেল। তবুও আমার মুখে কথা যোগাল না— কিন্তু মুখ তুলে চাইলুম। এ কি ! দেখি, তার দু'চোখ বয়ে বায় বায়ু করে জল পড়চে । ওরে পতিত ! ওরে দুৰ্ব্বল নারী ! মানুষের চোখের জল সহ করবার ক্ষমতা ভগবান তোকে যখন একেবারে দেননি, তখন তোর আর সাধ্য ছিল কি ! দেখতে দেখতে আমারও চোখের জলে বুক ভেসে গেছে। নরেন কাছে এসে ক্টোচার খুট দিয়ে আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে হাত ধরে বললে, চল, ওই গাছটার তলায় গিয়ে বসি গে, এখানে কেউ দেখতে পাবে। * মনে বুঝলুম, এ অন্যায়, একান্ত অন্যায়। কিন্তু তখনও যে তার চোখের পাতা ভিজে, তখনও যে তার কণ্ঠস্বর কান্নায় ভরা। বাগানের একপ্রান্তে একটা কঁাটালি-চাপার কুঞ্জ ছিল, তার মধ্যে সে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসালে । একটা ভয়ে আমার বুকের মধ্যে দুর দুরু করছিল, কিন্তু সে নিজেই দূরে গিয়ে বসে বললে, এই একান্ত নির্জন স্থানে তোমাকে ডেকে এনেচি বটে, কিন্তু তোমাকে ছোব না। এখনও তুমি আমার হওনি। তার শেষ কথায় আবার পোড়া চোখে জল এসে পড়ল। আঁচলে চোখ মুছে নাটীর দিকে চেয়ে চুপ করে বসে রইলুম। তার পর অনেক কথাই হ’ল ; কিন্তু থাক গে সে-সব । আজও ত প্রতিদিনকার অতি তুচ্ছ ঘটনাটি পৰ্য্যন্ত মনে করতে পারি, মরণেও যে বিস্মৃতি আসবে, সে আশা করতেও যেন ভরসা হয় না; একটা কারণে আমি আমার এতবড় দুৰ্গতিতেও কোনদিন বিধাতাকে দোষ দিতে পারিনি। স্পষ্ট মনে পড়ে, আমার চিত্তের মাঝে থেকে নরেনের সংস্রব তিনি কোনদিন প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করেননি। সে ৰে আমার জীবনে কত বড় মিথ্যে, এ ত তার অগোচর ছিল না। তাই তার প্রণয়-নিবেদনের মুহূর্তের উত্তেজন গরক্ষণের কতবড় অবসাদে যে ডুবে যেত, সে আমি খুলিমি। যেন কার কত চুরি-ডাকাতি সৰ্ব্বনাশ করে ঘুরে ফিরে এলুম, এমনি মনে হত। কিন্তু এমনি পোড়া কপাল যে, অন্তর্যামীর এতবড় ইঙ্গিতেও আমার হল হয়নি। হবেই বা কি করে ? কোনদিন ত শিখিনি যে, ভগবান মানুষের বুকের মধ্যেষ্ঠ বাস করেন। এই ৷ সবই তারই নিষেধ । * * శిషిశి