পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ঝিও হাসিল, কহিল, চল ঠাকরুণ, সাবান-টাবান মেখে আগে তৈরী হয়ে নাও, তার পরে তোমার কাছে বসে অনেক ভাল ভাল কথা শিখে নেব। দিদিমণি, কে ইনি ? মনোরম হাসি চাপিতে অন্যদিকে মুখ না ফিরাইলে, হয়ত সে এই অপরিচিত অশিক্ষিত মেয়েটির মুখের পরে কৌতুক ও প্রচ্ছন্ন উপহাসের আভাস লক্ষ্য করিত। こ。 মনোরম আশুবাবুর শুধু কন্যাই নয় ; তাহার সঙ্গী, সাথী, মন্ত্রী, বন্ধু—একাধারে সমস্তই ছিল এই মেয়োট। তাই পিতার মর্য্যাদা রক্ষার্থে যে সসঙ্কোচ দূরত্ব সন্তানের অবশ্য পালনীয় বলিয়া বাঙালী সমাজে চলিয়া আসিতেছে, অধিকাংশ স্থলেই তাহ রক্ষিত হইয়া উঠিত না । মাঝে মাঝে এমন সব আলোচনাও উভয়ের মধ্যে উঠিয় পড়িত যাহা অনেক পিতার কানেই অত্যন্ত অসঙ্গত ঠেকিবে, কিন্তু ইহাদের ঠেকিত না । মেয়েকে আশুবাবু যে কত ভালবাসিতেন তাহার সীমা ছিল না ; স্ত্রীবিয়োগের পর আর যে বিবাহের প্রস্তাব মনে ঠাই দিতেও পারেন নাই হয়ত তাহারও একটি কারণ এই মেয়েটি। অথচ বন্ধুমহলে কথা উঠিলে নিজের সাড়ে তিন মন ওজনের দেহ ও সেই দেহ বাতে পঙ্গুত্ব-প্রাপ্তির অজুহাত দিয়া সখেদে কহিতেন, আর কেন আবার একটা মেয়ের সর্বনাশ করা ভাই, যে দুঃখ মাথায় নিয়ে মণির মা স্বর্গে গেছেন সে ত জানি, সে-ই আগু বপ্তির যথেষ্ট । মনোরম। এ-কথা শুনিলে ঘোরতর আপত্তি করিয়া বলিত, বাবা, তোমার এ-কথা আমার সর না। এখানে তাজমহল দেখে কত লোকের কত-কি মনে হয়, আমার মনে হয় শুধু তোমাকে আর মাকে । আমার মা গেছেন স্বর্গে দুঃখ সয়ে ? আণ্ডবাৰু বলিতেন, তুই ত তখন সবে দশ-বারো বছরের মেয়ে, জানিস ত সব । কার গলায় যে কিসের মাল পরার গল্প আছে সে কেবল আমিই জানি রে মণি, আমিই জানি। বলিতে বলিতে র্তাহার দু’চক্ষু ছল ছল করিয়া আসিত। আগ্রায় আসিয়া তিনি অসঙ্কোচে সকলের সহিত মিশিয়াছেন, কিন্তু তাহার সৰ্ব্বাপেক্ষ হন্তত জন্সিয়াছিল অবিনাশবাবুর সহিত। অবিনাশ সহিষ্ণু ও সংযত ૨૨