পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষুদ্রৱ গৌৱব সে-রাত্রে চাদের বড় বাহার ছিল। শুভ্ৰ,স্নিগ্ধ, শান্ত কৌমুদী স্তরে স্তরে দিগদিগস্তে ছড়াইয়া পড়িতেছিল। আকাশ বড় নিৰ্ম্মল, বড় নীল, বড় শোভাময় । শুধু স্থদুর প্রান্তস্থিত দুই-একটা খণ্ড শুভ্র মেঘ মধ্যে মধ্যে দেখা যাইতেছে। সেগুলা বড় লঘুহৃদয় ; কাছে আসিয়া, আশে-পাশে ছুটিয়া বেড়াইয়া চাদকে চঞ্চল করিয়া দেয়। আজ তাহ পারে নাই, তাই চন্দ্রমা কিছু গম্ভীর-প্রকৃতি । সে স্থির গাম্ভীৰ্য্যের যে কি সৌনর্য্য তাহা আমি বর্ণনা করিতে পারিব না। আকাশে স্থান গ্রহণ করিলেই তাহার এ শোভ হয় না। তবে মনে হয়, যেদিন কবি র্তাহার রূপ দেখিয়া প্রথম আত্মবিস্তৃত হইয়াছিল, আজ বুঝি তাহার সেই রূপ । যে রূপ দেখিয়া বিরহী তাহার পানে চাহিয়া প্রিয়তমের জন্য প্রথম অশ্রমোচন করিয়াছিলেন, আজ বুঝি তিনি সেই রূপে গগনপটে উদিত হইয়াছিলেন ; আর যে রূপের মোহে ভ্রান্ত চকোরী সুধার আশায় প্রথম পথে ছুটিয়া গিয়াছিল—আজ বুঝি তিনি সেই সুধাকর । নির্নিমেষ-নয়নে চাহিয়া চাহিয়া সত্যই মনে হয়, কি শাস্ত, কি স্নিগ্ধ, কি শুভ্ৰ ! শুভ্ৰ জ্যোৎস্না উন্মুক্ত বাতায়নপথে সদানন্দের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিয়াছে। গৃহে দ্বীপ নাই। শুধু সমানন্দ নীচে বসিয়া গাজার কলিকায় দম দিতেছে ও রোহিণীকুমার মুখপানে চাহিয়া আছে। আর অদূরে কে একজন গাহিয়া চলিতেছে, “যমুনা-পুলিনে বসে কাদে রাধা বিনোদিনী” । সদাননা ধীরে ধীরে গাজীর কলিকা নামাইয়া রাখিয় ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়া বলিল, “আহ ।” তাহার পর চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিল । আর একবার সে মাখা নাড়িয়া মনে মনে সেই অসম্পূর্ণ পদটি আবৃত্তি করিয়া লইল—“কাদে রাধা বিনোদিনী” । কবে কোন স্নেহ-রাজ্যে বিরহ-ব্যথায় রাধা বিনোদিনী যমুনা-পুলিনে বলিয়া প্রিয়তমের জন্ত আশ্রমোচন করিয়াছিলেন সে-কথা ভাবিয়া আজ সদানন্দের চক্ষে জল আসিয়াছে। সে গাজ খাইতেছিল—কাদিতে বসে নাই। শুধু একটা গ্রাম্য, অতি ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ পদ অসময়ে তাহার চক্ষে জল টানিয়া অনিয়াছে । সদানদের মুখে ঈষৎ চাদের আলো পড়িয়ছিল। সে আলোকে রোহিণীকুমার সদানন্দের চক্ষের জল দেখিতে পাইল। একটু সরিয়া বসিয়া বলিল, “সদা, তোর নেশা হয়েচে, কাদচিল কেন ?” \లిసెన్స్