পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপ্রকাশিত রচনাবলী বেড়াজালে ঘেরিয়া রুই-কাতল হইতে শামুক-গুগলি পৰ্য্যন্ত ছাকিয়া তুলিতে বদ্ধপরিকর। হায় রে বিচার ! হায় রে সাহিত্যের রস ! মথিয়া মথিয়া আর তৃপ্তি নাই । ডাইনে ও বামে রবীন্দ্রনাথ ও নরেশচন্দ্রকে লইয়া অক্লান্তকৰ্ম্মী দ্বিজেন্দ্রনাথ নিরপেক্ষ সমান-তালে যেন তুলাধুনা করিয়াছেন। কিন্তু ততঃ কিম ? এই কিম্‌টুকুই কিন্তু ঢের বেশী চিন্তার কথা । নরেশচন্দ্র অথবা দ্বিজেন্দ্রনাথ ইহারা সাহিত্যিক মানুষ। ইহাদের ভাব-বিনিময় ও প্রতি-সম্ভাষণ বুঝা যায়। কিন্তু এইসকল আদর-আপ্যায়নের স্বত্র ধরিয়া যখন বাহিরের লোকে আসিয়া উৎসবে যোগ দেয়, তখন তাহদের তাওব-নৃত্য থামাইবে কে ? i. একটা উদাহরণ দিই। এই আশ্বিনের প্রবাসী’ পত্রিকায় শ্ৰব্ৰজদুল্লভ হাজরা বলিয়া এক ব্যক্তি রস ও রুচির আলোচনা করিয়াছেন । ইহার আক্রমণের লক্ষ্য হইতেছে তরুণের দল। এবং নিজের রুচির পরিচয় দিতে গিয়া বলিতেছেন, “এখন যেরূপ রাজনীতির চর্চায় শিশু ও তরুণ, ছাত্র ও বেকার ব্যক্তি সতত নিরত", সেইরূপ অর্থে পার্জনের জন্যই এই বেকার সাহিত্যিকের দল গ্রন্থরচনায় নিযুক্ত। এবং তাঁহার ফল হইয়াছে এই যে, “হাড়ি চড়াইয়৷ কলম ধরিলে যাহা হইবার তাহাই হইয়াছে।” এই ব্যক্তি ডেপুটিগিরি করিয়া অর্থ সঞ্চয় করিয়াছে, এবং আজীবন গোলামির পুরষ্কার মোট পেন্সনও ইহার ভাগ্যে জুটিয়াছে। তাই সাহিত্যসেবীর নিরতিশয় দারিদ্র্যের প্রতি উপহাস করিতে ইহার সঙ্কোচের বাধা নাই। লোকটি জানেও না যে, দরিদ্র্য অপরাধ নয়, এবং সৰ্ব্বদেশে ও সৰ্ব্বকালে ইহারা অনশনে প্রাণ দিয়াছে বলিয়াই সাহিত্যের আজ এত বড় গৌরব । ব্ৰজদুল্ল ভবাবু না জানিতে পারেন, কিন্তু “প্রবাসী’র প্রবীণ ও সহৃদয় সম্পাদকের ত এ-কথা অজানা নয় যে, সাহিত্যের ভালো-মন্দর আলোচনা ও দরিদ্র সাহিত্যিকের হাড়ি-চড়া না-চড়ার আলোচনা ঠিক এক বস্তু নয়। আমার বিশ্বাস, র্তাহার অজ্ঞাতসারেই এতবড় কটুক্তি র্তাহার কাগজে ছাপা হইয় গেছে। এবং এজন্ত তিনি ব্যথাই অনুভব করিবেন। এবং হয়ত, র্তাহার লেখকটিকে ডাকিয় কানে কানে বলিয়া দিবেন, বাপু, মানুষের দৈন্তকে খোটা দেওয়ার মধ্যে যে রুচি প্রকাশ পায় সেটা ভজ-সমাজের নয় এবং ঘাট-চুরির বিচারে পরিপক্কতা অর্জন করিলেই সাহিত্যের *রসে’র বিচারে অধিকার জন্মায় না । এ দুটোর প্রভেদ আছে,–কিন্তু সে তুমি বুঝিবে না। ইতি ৫ই আশ্বিন, ১৩৩৪ । 8} > RT-t