পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আপ্তবাবু ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন—কি যে তোরা সব বলিস মা ? অবিনাশ কহিলেন, অতিশয়োক্তি এর মধ্যে কোথাও নেই আপ্তবাবু। যাবার সময়ে শিবনাথ এই কথাই তার স্ত্রীকে বলবার চেষ্টা করেছিল। আজ কথা সে কয়নি, কিন্তু তার ঐ একটি কথাতেই আমার মনে হয়েচে ওদের পরস্পরের মধ্যে এখানেই মস্ত মতভেদ আছে। আগুবাবু বলিলেন, সে যদি থাকে ত শিবনাথেরই দোষ, কমলের নয়। মনোরম হঠাৎ বলিয়া উঠিল, তুমি কি চোখে যে তাকে দেখেচে সে তুমিই জান বাবা। কিন্তু তোমার মত মানুষকে যে শ্রদ্ধা করতে পারে না তাকে কি কখনো ক্ষমা করা যায় ! আপ্তবাবু কন্যার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, কেন মা ? আমাকে অশ্রদ্ধা করার ভাব ত তার একটা আচরণেও প্রকাশ পায়নি। কিন্তু শ্রদ্ধাও ত প্রকাশ পায়নি। আপ্তবাবু কহিলেন, পাবার কথাও নয় মণি। বরঞ্চ পেলেই তার মিথ্যাচার হতো। আমার মধ্যে যে বস্তুটাকে তোমরা শক্তির প্রাচুর্ঘ্য মনে করে বিস্ময়ে মুগ্ধ হও, ওর কাছে সেটা নিছক শক্তির অভাব । দুৰ্ব্বল মানুষকে মেহের প্রশ্রয়ে ভালবাসা যায়, এই কথাই আমাকে সে বলেচে, কিন্তু আমার যে মূল্য তার কাছে নেই, জবরদস্তি তাই দিতে গিয়ে সে আমাকেও থেলো করেনি, নিজেকেও অপমান করেনি। এই ত ঠিক, এতে ব্যথা পাবার ত কিছুই নেই মণি। এতক্ষণ পৰ্য্যন্ত অজিত অন্যমনস্কের ন্যায় ছিল, এই কথায় সে চাহিয়া দেখিল। সে কিছুই জানিত না, জানিয়া লইবার অবকাশও হয় নাই। সমস্ত ব্যাপারটাই তাহার কাছে ঝাপসা—এখন আপ্তবাবু যাহা বলিলেন তাহাতেও পরিষ্কার কিছুই হইল না, তবুও মন যেন তাহার জাগিয়া উঠিল। মনোরমা নীরব হইয়া রহিল, কিন্তু অবিনাশবাবু উত্তেজনার সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, তা হলে স্বাৰ্থত্যাগের মূল্য নেই বলুন ? আণ্ডবাবু হাসিলেন, বলিলেন, প্রশ্নটা ঠিক অধ্যাপকের মত হ’ল না। যাই হোক, তার কাছে নেই। o তাহলে আত্ম-সংযমেরও দাম নেই ? তার কাছে নেই। সংযম যেখানে অর্থহীন সে শুধু নিষ্ফল আত্ম-পীড়ন। আর তাই নিয়ে নিজেকে বড় মনে করা কেবল আপনাকে ঠকান নয়, পৃথিবীকে ঠকান। তার মুখ থেকে শুনে মনে হ’লে কমল এই কথাটাই কেবল বলতে চায়। এই বলিয়া 8b'.