পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেধ প্রশ্ন লিখিতেছে। মধ্যাহ্ন-ভোজনের সময় সে প্রায় কথাই কহিল না এবং খাওয়া শেষ হইতেই উঠিয়া চলিয়া গেল। অন্যান্য দিনের তুলনায় তাহ যেমন রূঢ় তেমনি বিস্ময়কর। আপ্তবাবুর ক্ষোভের পরিসীমা নাই, কছিলেন, ব্যাপার কি মণি ? মনোরম আজ বরাবরই পিতার দৃষ্টি এড়াইয়া চলিতেছিল, এখনও বিশেষ কোনদিকে না চাহিয়াই কহিল, জানিনে ত বাবা ! তিনি ক্ষণকাল নিজের মনে চিন্তা করিয়া যেন নিজেকেই বলিতে লাগিলেন, তার ফিরে আসা পৰ্য্যন্ত আমি ত জেগেই ছিলাম। খেতেও বললাম, কিন্তু অনেক রাত্রি হয়েচে বলে সে নিজেই খেলে না। তোমার শুয়ে পড়াটা হয়ত ঠিক হয়নি কিন্তু এতে এমন কি অষ্ঠায় হয়েচে আমি ত ভেবেই পাইনি। এই তুচ্ছ কারণটাকে সে এত করে মনে নেবে এর চেয়ে আশ্চৰ্য্য আর কি আছে ? মনোরম চুপ করিয়া রহিল। আশুবাবু নিজেও কিছুক্ষণ মৌন থাকিয়া ভিতরের লজ্জাট দমন করিয়া বলিলেন, কথাটা তাকে তুমি জিজ্ঞেস করলে না কেন ? মনোরম জবাব দিল, জিজ্ঞেস করবার কি আছে বাবা ? জিজ্ঞেস করিবার অনেক আছে, কিন্তু করাও কঠিন—বিশেষতঃ মণির পক্ষে । ইহা তিনি জানিতেন। তথাপি কহিলেন, সে যে রাগ করে আছে এ ত খুব স্পষ্ট । বোধ হ’ল সে ভেবেচে তুমি তাকে উপেক্ষ কর । এ-রকম অন্যায় ধারণা ত তার মনে রাখা যেতে পারে না । ". মনোরম বলিল, আমার সম্বন্ধে ধারণা যদি তিনি অন্যায় করে থাকেন সে র্তার দোষ । একজনের দোষ সংশোধনের গরজটা কি আর একজনের গায়ে পড়ে নিতে হবে বাবা ? তিনি সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিলেন না । মেয়েকে তিনি যেভাবে মানুষ করিয়া আসিয়াছেন তাহাতে তাহীর আত্মসন্মানে আঘাত পড়ে এমন কোন আদেশই করিতে পারেন না। সে উঠিয়া গেলে এই কথাটাই নিজের মধ্যে অবিশ্রাম তোলপাড় করিয়া তিনি অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া রহিলেন । এরূপ কলহ ঘটিয়াই থাকে এ ভ্রম ক্ষণিক মাত্র, এমন একটা কথা তিনি বহুবার মনে মনে আবৃত্তি করিয়াও জোর পাইলেন না। অজিতকেও তিনি জানিতেন। শুধু কেবল সে সকল দিক দিয়াই সুশিক্ষিত নয়, তাহার মধ্যে একটা চরিত্রের সত্যপরতায় তিনি নিঃসংশয়ে উপলব্ধি করিয়াছিলেন যে, আজিকার এই অহেতুক বিরাগের কোনমতেই সামঞ্জস্য হয় না। সকলের অপরিসীম উদ্বেগের হেতু হইয়াও সে লজ্জাবোধের পরিবর্তে রাগ করিয়া রহিল, এমন অসম্ভব যে কি করিয়া তাহাতে সম্ভবপর হইল মীমাংসা করা কঠিন। やQ