পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( কছিল, আমার নিজের বাবাও বড় কম লোক ছিলেন না । তিনি এমনি ধীর, এমনি শান্ত মানুষটি ছিলেন। কমল দাসীর কঙ্কা, ছোটজাতের মেয়ে, সকলের কাছে অজিত এই কথাই শুনিয়াছিল। এখন কমলের নিজের মুখে তাহার পিতার গুণের উল্লেখে তাহার জন্ম-রহস্ত জানিবার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হইয়া উঠিল। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের দ্বারা পাছে তাহার ব্যথার স্থানে অতর্কিত আঘাত করে এই ভয়ে প্রশ্ন করিতে পারিল না । কিন্তু মনটি তাহার ভিতরে ভিতরে স্নেহে ও করুণায় পূর্ণ হইয়া উঠিল। খাওয়া শেষ হইল। কিন্তু তাহাকে উঠিতে বলায় অজিত অস্বীকার করিয়া বলিল, আগে আপনার খাওয়া শেষ হোক। তার পরে। কেন কষ্ট পাবেন অজিতবাবু, উঠুন। বরঞ্চ মুখ ধুয়ে এসে বক্সন, আমি খাচ্চি। না, সে হবে না। আপনি না খেলে আমি আসন ছেড়ে এক-পাও উঠবো না । বেশ মানুষ ত! বলিয়া কমল হাসিয়া আহাৰ্য্য-দ্রব্যের ঢাকা খুলিয়া আহারে প্রবৃত্ত হইল। কমল লেশমাত্র অত্যুক্তি করে নাই। চাল-ডাল ও আলু-সিদ্ধই বটে। শুকাইয়া প্রায় বিবর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। অন্যান্য দিন সে কি খায়, না খায়, সে জানে না। কিন্তু আজ এত প্রকার পর্য্যাপ্ত আয়োজনের মাঝেও এই স্বেচ্ছাকৃত আত্মপীড়নে তাহার চোখে জল আসিতে চাহিল। কাল শুনিয়াছিল দিনান্তে সে একটিবার মাত্র থায় এবং আজ দেখিতে পাইল তাহ এই । সুতরাং যুক্তি ও তর্কের ছলনায় কমল মুখে যাহাই বলুক, বাস্তব ভোগের ক্ষেত্রে তাহার এই কঠোর আত্ম-সংযম অজিতের অভিভূত মুগ্ধ চক্ষে মাধুৰ্য্য ও শ্রদ্ধায় অপরূপ হইয়া উঠিল। এবং বঞ্চনায়, অসম্মানে ও অনাদরে যে কেহ ইহাকে লাঞ্ছিত করিয়াছে তাহদের প্রতি তাহার ঘৃণার অবধি রহিল না । কমলের খাওয়ার প্রতি চাহিয়া চাহিয়া এই ভাবটাকে সে আর চাপিতে পারিল না, উচ্ছসিত আবেগে বলিয়া উঠিল, নিজেদের বড় মনে করে যার অপমানে জাপমাকে দূরে রাখতে চায়, যারা অকারণে গ্লানি করে বেড়ায়, তারা কিন্তু আপনার পদম্পর্শেরও যোগ্য নয়। সংসারে দেবীর আসন যদি কারও থাকে সে আপনার । কমল অকৃত্রিম বিস্ময়ে মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কেন ? কেন তা জানিনে, কিন্তু আমি শপথ করে বলতে পারি। কমলের বিস্ময়ের ভাব কাটিল না, কিন্তু সে চুপ করিয়া রছিল। অজিত বলিল, যদি ক্ষমা করেন ত একটা প্রশ্ন করি। কি প্রশ্ন ? כר