পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ পাপিষ্ঠ শিবনাথের কাছে এই অপমান ও বঞ্চনা পাবার পরেই কি এই কৃচ্ছ্ব অবলম্বন করেচেন ? কমল কহিল, না । আমার প্রথম স্বামী মরবার পর থেকেই আমি এমনি খাই । এতে আমার কষ্ট হয় না । () অজিতের মুখের উপরে যেন কে কালি ঢালিয়া দিল। সে কয়েকমুহূৰ্ত্ত স্তব্ধ থাকিয়া নিজেকে সামলাইয়া লইয়া আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার আর একবার বিবাহ হয়েছিল নাকি ? কমল কহিল, হঁ। তিনি একজন অসমীয়া ক্রিশান। তার মৃত্যুর পরেই আমার বাবা মারা গেলেন হঠাৎ ঘোড়া থেকে পড়ে। তখন শিবনাথের এক খুড়ে ছিলেন বাগানের হেড ক্লার্ক । তার স্ত্রী ছিল না, মাকে তিনি আক্রয় দিলেন । আমিও তার সংসারে এলাম। এইরকম নানা দুঃখে-কষ্ট্রে পড়ে একবেলা খাওয়াই অভ্যাস হয়ে গেল। কৃচ্ছ্বসাধন আর কি, বরঞ্চ শরীর মন দুই-ই ভাল থাকে। অজিত নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, আপনারা শুনেচি জাতে র্তাতি। কমল কহিল, লোকে তাই বলে। কিন্তু মা বলতেন তার বাবা ছিলেন আপনাদের জাতেরই একজন কবিরাজ। অর্থাৎ আমার সত্যিকার মাতামহ তাতি নয় বৈদ্ধ। এই বলিয়া সে একটু হাসিয়া কহিল, তা তিনি যে-ই হোন, এখন রাগ করাও বৃথা, আপশোস করাও বৃথা । অজিত কহিল, সে ঠিক । , কমল বলিল, মার রূপ ছিল, কিন্তু রুচি ছিল না। বিয়ের পরে কি একটা দুর্নাম রটায় তার স্বামী তাকে নিয়ে আসামের চা-বাগানে পালিয়ে যান। কিন্তু বঁাচলেন না, কয়েক মাসের জরেই মারা গেলেন। বছর তিনেক পরে আমার জন্ম হ’ল বাগানের বড় সাহেবের ঘরে। তাহার বংশ ও জন্মগ্রহণের বিবরণ শুনিয়া অজিতের মুহূৰ্ত্তকাল পূর্বের স্নেহ ও শ্রদ্ধাবিস্ফারিত হৃদয় বিতৃষ্ণ ও সঙ্কোচে বিন্দুবৎ হইয়া গেল। তাহার সবচেয়ে বাজিল এই কথাটা যে, নিজের ও জননীর এতবড় একটা লজ্জাকর বৃত্তান্ত বিবৃত করিতে ইহার লজ্জার লেশমাত্র নাই । অনায়াসে বলিল, মায়ের রূপ ছিল, কিন্তু রুচি ছিল না। যে অপরাধে একজন মাটির সহিত মিশিয়া যাইত, সে ইয়ার কাছে রুচির বিকার মাত্র । তার বেশি নয়। কমল বলিতে লাগিল, কিন্তু আমার বাপ জিলেন সাধু লোক। চরিত্রে, পাণ্ডিত্যে, সততায়—এমন মানুষ খুব কম দেখেচি অজিতবাবু। জীবনের উনিশটা বছর আমি তার কাছেই মানুষ হয়েছিলাম । 画 १९