পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা হয় ত, আর বোধ হয় দেখা করবার সময় পাবো না। হুৈম আপনাকে বড় ভালবাসে, যদি অবকাশ পান মাঝে মাঝে একটা খবর দেবেন। বলিয়া সে আর কোন প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করিয়া বাহির হইয়া গেল। প্রবঞ্চিতের লজ্জা ও জালা অত্যন্ত সঙ্গোপনে তাহার বুকের মধ্যে ধৰ্ব্ব ধক করিয়া জলিতে লাগিল, এবং বিফলমনোরথ মাতাল যেমন করিয়া তাহার মদের দোকানের রুদ্ধ দুয়ার হইতে ফিরিবার পথে নিজেকে সান্থন দিতে থাকে, তেমনি করিয়া সে সমস্ত পথটা মনে মনে বলিতে লাগিল, আমি বঁাচিয়া গেলাম। স্বেচ্ছাচারিণীর মোহের বেষ্টন হইতে বাহির হইতে পারিয়া আমার হৈমকে আবার ফিরিয়া পাইলাম । কথাগুলো কেবলমাত্র বারংবার আবৃত্তি করিয়াই সে তাহার পীড়িত, আহত হৃদয়ের কাছে যেন সপ্রমাণ করিতে চাহিল যে, এ ভালই হইল যে ষোড়শীর গৃহের দ্বার তাহার মুখের উপর চিরদিনের মত বন্ধ হইয়া গেল । মিনিট দুই-তিন পরে জীবানন্দ বাহিরে আসিয়া দেখিল, অন্ধকারে একটা খুটি ঠেস দিয়া ষোড়শী চুপ করিয়া দাড়াইয়৷ আছে। কাছে আসিয়া আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, নিৰ্ম্মলবাবু কি চলে গেলেন ? এ-প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন ছিল না, ষোড়শী তেমনি চুপ করিয়াই রহিল। জীবানন্দ কহিল, ভদ্রলোকটিকে ঠিক বুঝতে পারলাম না । ষোড়শী পথের দিকে চাহিয়া ছিল, সেইদিকেই চক্ষু রাখিয়া বলিল, তাতে আপনার ক্ষতি কি ? আমার ক্ষতি ? না, তা বোধ করি কিছু নেই, কিন্তু তোমার ত থাকতে পারে ?. তুমি কি তাকে বুঝতে পেয়েচ ? ষোড়শী কহিল, আমার যতটুকু দরকার তা পেরেচি বই কি ? তা হলে ভাল। বলয় সে ক্ষণকাল নিঃশব্দে থাকিয়া যেন নিজের মনেই কহিল, তাকে মনে রাখবার জন্যে কি-রকম ব্যাকুল প্রার্থনা জানিয়ে গেলেন, দরখাস্ত মঞ্জুর করলে ত? বলিয়া মুখ তুলিয়। চাহিতে সেই অন্ধকারেও দু'জনের চোখে চোখ মিলিল । ষোড়শী দৃষ্টি অবনত করিল না, বলিল, আমি তাকে যতখানি জানি, তার অৰ্দ্ধেকও যদি আমাকে জানবার তার সময় হ’তো, এতবড় বাহুল্য আবেদন আমার কাছে তিনি মুখে উচ্চারণ করতেও পারতেন না। আমার ধা-কিছু কল্পনা, যত-কিছু আনন্দের ভাবনা, সে ত কেবল তাদের নিয়েই । তাদের দেখেই ত আমি সেষোড়শী অার নেই। এই যে চণ্ডীগড়ের ভৈরবী-পদ, যা ভাগ করে নেবার লোভে আপনাদের ছেড়াছড়ির অবধি নেই, যে জন্তে কলঙ্কে দেশ আপনারা ছেয়ে দিলেন, সে যে আজ জীর্ণবস্ত্রের মত ত্যাগ করে যাচ্চি, সে শিক্ষা কোথায় পেয়েচি জানেন ? ጏፀ?